Thursday, February 6, 2025
Latest News

নোট বাতিলের ৪ বছর, সেই অন্ধকারময় দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে উঠে দেশবাসী

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: আজ থেকে ঠিক ৪ বছর আগে আজকের দিনেই অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বরের সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে দেওয়ার সময় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষণা করেন। সেই সময় মানুষের এক তীব্র অস্থিরতা তৈরি। হঠাৎ এমন ঘোষণায় মানুষ কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। সবার গলাতেই সেদিন ছিল উদ্বেগ, যে এবার কি হবে! সেই অন্ধকারময় দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে উঠেন দেশবাসী।

সেই সময় অনেকেই বলেছিলেন “কালো টাকা কি আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে!” আবার অনেকেই একাজের জন্য বাহবাও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে – ধনীদের কাছে থাকা কালো টাকা উদ্ধারের ওই প্রচেষ্টার জন্য। কিন্তু কদির পরেই আবার তারাও এর ফল ভুগতে থাকে। ৯ই নভেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সব ধরণের ব্যাঙ্কিং লেনদেন। তারও পরের দিন থেকে একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল পুরনো নোট জমা দেওয়া, আর অন্য দিকে নতুন নোট জোগাড় করার পালা। চারিদিকে শুধু হাহাকারের শব্দ।

২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর ‌দেশ জুড়ে তোলপাড় তুলে ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট বাতিল করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ যার জেরে বিস্তর হেনস্থা হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে৷ সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছিল ছোট ব্যবসায়ী ও সাধারণ গরীব মানুষগুলো। নিজের টাকা তোলার জন্য ব্যাংক ও এটিএম-‌এর লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০৪ ছাড়িয়েছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও রীতিমতো ঢাক-‌ঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, কালো টাকা ধরার অভিযান সঠিক৷ দুশ্চিন্তা নাকি শুধু কালোটাকার কারবারিদের৷ যত দিন গেছে, তত সংশয় বেড়েছে, কাজের কাজ হয়নি৷ তার ঠিক এক বছর পর বার্ষিক রিপোর্টে তথ্য প্রকাশ করে আরবিআই৷

২০১৭ সালের রিজার্ভ ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, গত মার্চ পর্যন্ত ৮ দশমিক ৯ কোটি সংখ্যক ১০০০ টাকা (‌৮,৯০০ কোটি টাকা মূল্যের)‌ ব্যাংকে ফেরেনি৷ মার্চের শেষে বাজারে চালু ছিল মোট ৬৩২.‌৬ কোটি সংখ্যক ১০০০ টাকার নোট (‌৬,৩২,৬০০ কোটি টাকা মূল্যের)‌৷ নভেম্বরে নোট বাতিলের পর ছাড়া হয় নতুন ২০০০ টাকার নোট৷ মার্চের শেষে বাজারে চালু মোট অর্থের অর্ধেকেরও কিছু বেশি ছিল এই ২০০০ টাকার নোটে৷ নোট ছাপার খরচের তথ্যও দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক৷ ২০১৬-‌‌১৭ অর্থবর্ষে অঙ্কটা ৭,৯৬৫ কোটি৷ আগের অর্থবর্ষের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি৷ তার মানে ফেরত না আসা টাকায় যেটুকু লাভ, তারও অনেকটা চলে গেছে নোট ছাপতে৷

নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণের শুরুতেই প্রথম যে উদ্দেশ্যটার কথা বলেছিলেন, তা হল দুর্নীতি বন্ধ আর কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু রিপোর্ট বলছে কোনও কালো টাকা উদ্ধার হয়নি। বরং আরও বেড়েছে। ২০০০ নোট আসার পর জাল নোটের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতি হিসেবে ফের ২০০০ নোট বাতিল হতে চলেছে। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০০ নোট সব ব্যাঙ্কে জমা করার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, “কালো টাকার সিংহভাগটাই নগদে রাখা থাকে না। বিদেশী ব্যাংকে অথবা জমি-বাড়ি-গয়নায় বিনিয়োগ করা হয় বেশীরভাগ কালো টাকা। তাই মোট কালো টাকার খুব একটা সামান্য অংশই এভাবে উদ্ধার করা সম্ভব – যদিও আদৌ উদ্ধার করা গিয়ে থাকে সাধারণ মানুষকে এরকম কষ্টের মধ্যে ফেলেও। কিন্তু বাস্তবতাটা হল বাতিল হয়ে যাওয়া নোটের ৯৯ শতাংশই তো ফেরত এসেছে। তাহলে কালো টাকার সুরাহা হল কোথায়?”

বাস্তবে এক রিপোর্ট বলছে, নোটবন্দির জেরে দেশের জিডিপি গ্রোথ রেট অনেকটাই কমে গিয়েছিল। দেশের আর্থিক বিকাশ পাঁচ শতাংশ কমে যায়। নোটবন্দির সিদ্ধান্তে কয়েক মাসের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রবল বিপদের মুখে পড়তে হয়। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দির সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশের আর্থিক দুরবস্থা চলছে। এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য এখনও লড়ছে কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশবাসী।

উল্লেখ্য, মোদী সরকার আসার পর আজ পর্যন্ত দেশে তেমন কোনও উন্নয়ন মূলক কাজের রেকর্ড নেই। শুধু দেশবাসীকে দুঃখ, কষ্ট আর হয়রানী ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি।

 

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!