Friday, March 29, 2024
ফিচার নিউজসম্পাদক সমীপেষুসম্পাদকীয়

ইতিহাসের পাতায় স্থান না পাওয়া সেইসব ব্রাত্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কুর্ণিশ

সুরাইয়া খাতুন

“ভারতবর্ষ : সূর্যের এক নাম/ আমরা রয়েছি সেই সূর্যের দেশে।” আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য হিন্দু মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। উভয়েরই তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আজকের এই স্বাধীনতার স্বাদ। জেল খাটা ১ কোটি মুসলমানের আত্ম বলিদান ও ফাঁসি হওয়া ৫ লক্ষ মুসলমানের প্রানের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের শুধু পাওয়া যায় হিন্দু সংগ্রামীদের কীর্তি কাহিনী। এইসব বিকৃত ইতিহাসের পাতায় মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রাত্য। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম পাই, তাঁরা হলেন গান্ধীজি, নেতাজী সুভাষ, অরবিন্দ। কিন্তু পাই না হাকিম আজমল খাঁ, শাহনাওয়াজ খান, আতাউল্লা বুখারি, মাওলানা হুসেন আহমাদ মাদানি , মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি, মাওলানা গোলাম হোসেন, আজিজ আহমাদ, ডি এম খান, আব্দুল করিম গনি, জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখের নাম। এঁরা একাধিক বার দীর্ঘমেয়াদী জেল খেটেছেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করার জন্য।

লালকেল্লায় প্রথম কে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, কে প্রথম ব্রিটিশ পতাকা ছুঁড়ে ফেলে লাগিয়ে দেন ভারতের গৌরবময় সাফল্যের নিদর্শন তার জাতীয় পতাকা। তা আমরা জানি না। তিনি হলেন কর্ণেল শাহনাওয়াজ খান। তিনি হলেন ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী, আজাদ হিন্দ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের সহযোদ্ধা শাহনাওয়াজ খান।

মাওলানা হজরত মুহানী এমন এক নেতা, তিনি তোলেন সর্ব প্রথম ব্রিটিশ বিহীনচাই স্বাধীনতা। জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তাঁর নাম কি আমরা জানি? কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে ব্যার্থ ক্ষুদিরামের নাম আমরা সবাই জানি, কিংসফোর্ড হত্যাকারী সফল শের আলী বিপ্লবীকে আমরা কেউ জানিনা।বিখ্যাত নেতা জহুরুল হাসানকে হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষনা করে ইংরেজ সরকার।

হাকিম আজমল খাঁ ছিলেন তত্‍কালীন সময়ে সারা হিন্দুস্তানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যাঁর সংস্পর্শে আসলে হিন্দু মুসলিম নব প্রাণ পেতেন, সেই হাকিম আজমল খাঁ কে আমরা জানি না।  খান বাহাদুর খান যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নিজ সরকার গঠন করে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। ১৮৬০ সালে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। এসব ইতিহাস ধামাচাপা আছে।

মাওলানা কাসেম নানুতবী সাহেব উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদ্রাসাকে ব্রিটিশ বিরোধী এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতেনই না, তিনি হলেন মাওলানা আজাদ। তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থান পেলেন না।

বিপ্লবী মীর কাশেম, টিপু সুলতান, মজনু শা, ইউসুফ এরা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যান। সর্ব ভারতীয় নেতা আহমাদুল্লাহ। তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার টাকা যার মাথার ধার্য করেছিল ব্রিটিশরা।

এইরকম হাজার হাজার মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা জানি না, যাঁদের রক্ত ও সংগ্রামের মাধ্যমে ভারত পরাধীনতার অন্ধকার কাটিয়ে উঠেছে। অথচ দুঃখের বিষয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁরা ব্রাত্য।

 

1 Comment

  • আপনি ঠিক ই লিখেছেন। There is a clear bias. However, not all names are forgotten.

Leave a Reply

error: Content is protected !!