Thursday, November 21, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

চুপসে যাচ্ছে ৫৬ ইঞ্চি! করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কোনো যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছে না মোদী সরকার

New Delhi: Prime Minister Narendra Modi with Union Home Minister Amit Shah and BJP Working President J.P. Nadda during the two-day compulsory orientation programme 'Abhyas Varga' organised for all the newly-elected Members of Parliament of BJP in the Lok Sabha and Rajya Sabha, at Parliament in New Delhi on Aug 3, 2019. (Photo: IANS)

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: নোটবাতিল, জিএসটি, সিএএ-এনআরসি বিতর্ক, কৃষি আন্দোলন, এমনকি অতিমারির প্রথম দফাও সামলে দিতে পেরেছিলেন অক্লেশে। ছাপান্ন ইঞ্চিতে টোল পড়েনি তেমন। রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, এত ঝড়-ঝাপটাতেও যা ঋজু ছিল, সেই নরেন্দ্র মোদীর ‘ব্র্যান্ড-ইমেজ’ এ বার অনেকটাই ধ্বস্ত হয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে।

সূত্রের মতে, এর আগের বিতর্কগুলিতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা মোদী কোনও না কোনও সুবিধাজনক রাজনৈতিক ভাষ্য বা যুক্তি তৈরি করতে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু স্রেফ অক্সিজেনটুকু দিতে না-পারার কারণে তৈরি মৃত্যুমিছিল পর্দার আড়ালে ঢাকার মতো কোনও যুক্তিই এখন হাতে নেই বিজেপির। এত দিন শত সমস্যা সত্ত্বেও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের একাংশ মোদীর পাশে থেকেছে। এ বারে সেই সমর্থনে চিড় ধরছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের মতে, অতিমারির এই ভয়াবহতার জন্য রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো বা অ-বিজেপি দল, বিশেষ করে কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারকে দায়ী করে খুব একটা গা বাঁচাতে পারছেন পারছেন না মোদী। যদিও গত কালও ঠিক এটাই করেছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। কারণ, দেশ জুড়ে এই ভয়াবহতা শুরু হওয়ার মুখেও মোদী বক্তৃতা দিয়ে কোভিড-জয়ের পতাকা উড়িয়েছেন। সাফল্যের কৃতিত্ব নিজে নিয়েছেন।

রাজনীতির লোকজনের মতে, নোট বাতিল বা জিএসটি-র সময়েও দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি মোদীর পাশেই থেকেছে আদর্শগত কারণে। বিশেষ করে নোটবাতিলের সময় দুর্নীতির সঙ্গে এবং আপাত ভাবে ধনী শ্রেণির সঙ্গে লড়াইয়ের একটা ভাষ্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে এমন কোনও ভাবে ব্যাখ্যা করা বা কোনও আদর্শ দেখিয়ে প্রশমিত করা অসম্ভব। শুধুমাত্র নিকটজনের মৃত্যুই নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণি চিরকাল যে বিভিন্ন সুবিধাগুলি ভোগ করে এসেছে, তার অভূতপূর্ব কাটছাঁট হয়ে গিয়েছে। কোনও রকম আর্থিক ক্ষমতা বা তথাকথিত ‘নেটওয়ার্ক’ কাজে লাগিয়েও হাসপাতালের সামান্য বেড বা অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করা যাচ্ছে না। প্রিয়জনের সৎকারও ঠিক মতো করা যাচ্ছে না বহু ক্ষেত্রেই।

পাশাপাশি, এই হাহাকারের মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারের সিদ্ধান্ত মোদীর স্বঘোষিত ‘ফকির’ ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। প্রতিটি বক্তৃতায় মোদী নিজেকে ক্ষমতার প্রতি নির্লোভ, জাতীয় স্বার্থ এবং জাতীয়তাবাদী মননকে আগে রাখা এক দেশসেবক হিসাবেই তুলে ধরে এসেছেন। দেশের একটি বড় অংশের মানুষ তাতে যে আস্থাও রেখেছেন তা উনিশের লোকসভা ভোটের ফলে প্রমাণিত। কিন্তু এই প্রথম বার মোদীও তাঁর বাহিনীর রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভ শেষ তিন দফার প্রচারে বড় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের সামনে, এমনটাই মনে করছে দেশের বিরোধী শক্তি। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তাতে হিন্দুত্বের আশ্রয় নেওয়ার কোনও অবকাশ নেই। গত বছর অতিমারির প্রথম পর্যায়ে তবলিগি জামাতকে কেন্দ্র করে যুক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এ বারে কুম্ভমেলার কারণে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি সামনে চলে আসায় মোদীর হিন্দুত্বের ঢালকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।

প্রথম ঢেউকে কাজে লাগিয়ে মোদী ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের মঞ্চ তৈরি করে দেশবাসীকে তাঁর নেতৃত্ব সম্পর্কে আস্থাবান করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বারে দেশের মৌলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল অবস্থা প্রকট হয়ে ওঠায় শুধু দেশের ভিতরে নয়, গোটা বিশ্বেই সেই আত্মনির্ভরতার স্লোগান হাস্যকর করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!