দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: শিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচার চালাচ্ছে চিন সরকার। উইঘুর মুসলিমদের বন্দি শিবিরে রেখে যে পদ্ধতিগত মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানো হচ্ছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। বৃহস্পতিবার একটি ১৬০ পাতার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাতেই উঠে এসেছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যাবতীয় তথ্য যা শুনে বুক কেঁপে উঠছে মানবতাবাদীদের। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে বেজিং কীভাবে বেছে বেছে উইঘুরদের টার্গেট করছে তা তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি। এরপর মানবাধিকার সংগঠনটির তরফে এই বিষয় রাষ্ট্রসংঘের তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এর আগে উইঘুর নিয়ে যেসব রিপোর্ট বা গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর তুলনায় এটা অনেকটাই আলাদা।
এই রিপোর্টে চিনের বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে আসা ৫০জনের জবানবন্দি রয়েছে। সেখানে তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে চিনের বন্দি শিবিরগুলিতে কী ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একজন প্রাক্তন বন্দি জানাচ্ছেন, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় ’টাইগার চেয়ারের’ ব্যবহার করত চিনা আধিকারিকরা। এই টাইগার চেয়ার হল একটি স্টিলের চেয়ার যার পা গুলি লোহার এবং চেয়ারের হাতলে রয়েছে হাতকড়া। এখানে কোনও বন্দিকে বসানো হলে তাকে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। আরও দুই প্রাক্তন বন্দি জানান, তাদের পায়ে অত্যন্ত ভারী শেকল পরিয়ে রাখা হত, অনেকক্ষেত্রে যা থাকত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে। অনেক বন্দিকে বৈদ্যুতিন লাঠি দিয়েও প্রহার করা হতো, চোখে দেওয়া হতো মরিচের গুঁড়া।
চিনের কমিউনিস্ট প্রশাসনের এমন অমানবিকতার বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন তদন্তকারী ও অ্যামনেস্টির বর্তমান মহাসচিব অ্যাগ্নেস ক্যালামার্ড বলেন, ’চিনারা একটি যন্ত্রণাদায়ক নরক তৈরি করেছে। মানবিকতার বিবেককে এটি আঘাত করেছে। অসংখ্য মানুষের মগজধোলাই চলছে এবং তারা নির্যাতন ও অবমাননার শিকার হচ্ছেন। বন্দি শিবিরে আতঙ্কে দিন কাটছে লক্ষ লক্ষ মানুষের।’ এদিকে চিনের উইঘুরদের রক্ষায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ক্যালামার্ড। তিনি বলেন, গুতেরেস তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আরও বলেন, আন্তোনিও গুতেরেস চিনের নিন্দা জানাননি। এ ছাড়া সেখানকার পরিস্থিতি জানতে আন্তর্জাতিক তদন্তেরও কোনও আহ্বান জানাননি।