আমেরিকা, ২৬ আগস্ট: ১৯৬১ সালের ২৩ জানুয়ারি আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনার গোল্ডসবোরোতে দু’টি পরমাণু বোমা পড়েছিল। আমেরিকার কোনও শত্রু দেশ কিন্তু সেগুলি ফেলেনি। আমেরিকারই একটি সেনা বিমান থেকেই এই দু’টি বোমা পড়েছিল। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছিল উত্তর ক্যারোলিনা।
গোল্ডসবোরোর সেমর জনসন বিমানঘাঁটি থেকে মাঝ রাতে বি-৫২জি বোমারু বিমান ওই দু’টি বোমা নিয়ে উড়েছিল। মাঝ আকাশে পরীক্ষামূলক জ্বালানি ভরছিল বিমানটি। তেল নেওয়ার সময়ই বি-৫২জি-তে বড়সড় সমস্যা দেখতে পান জ্বালানি ভরার বিমানের পাইলট। বোমারু বিমানটি থেকে তেল লিক করছিল। সঙ্গে সঙ্গেই সতর্ক করা হয় পাইলটকে।
ওই সতর্কবার্তার পর মুহূর্তেই জ্বালানি ভরা বন্ধ করে নিরাপদ দূরত্বে বিমানটিকে উড়িয়ে নিয়ে যান বি-৫২-এর চালক। চালক ভেবেছিলেন অতিরিক্ত জ্বালানি বেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিরাপদে বিমানটিকে অবতরণ করাবেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। মাত্র তিন মিনিটে ১৭ হাজার কেজি জ্বালানি বেরিয়ে গিয়েছিল। তৎক্ষণাৎ বিমান ঘুরিয়ে গোল্ডসবোরোর সেমর জনসন বিমানঘাঁটির দিকে রওনা দেন চালক। কিন্তু পৌঁছতে পারেননি।
মাটি থেকে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। পাক খেতে খেতে নীচে নেমে আসতে শুরু করে বিমান। বেগতিক বুঝে ন’হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছলে চালক বিমান খালি করার নির্দেশ দেন। পাঁচ জন নিরাপদে প্যারাশুটে নীচে নেমে আসতে পেরেছিলেন। ঠিকমতো অবতরণ করতে না পারায় এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। বাকি দু’জন দু’হাজার ফুট উচ্চতায় বিমান বিস্ফোরণে মারা যান। এই দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল আমেরিকাকে। ওই বিমানে থাকা দু’টি পরমাণু বোমা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্ব।
হিরোশিমায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল যে পরমাণু বোমা, তার চেয়ে ২৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল এই দু’টি বোমা। এতটাই শক্তিশালী ছিল যে অন্তত ১৪ কিলোমিটার ব্যাস জুড়ে এলাকা নিমেষে মরুভূমিতে পরিণত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। ওই অংশে একটিও প্রাণ খুঁজে পাওয়া যেত না। ধ্বংসের প্রভাব পড়ত তার পরেও। অনেক খোঁজ চলার পর বোমা দু’টি উদ্ধার হয় ঠিকই কিন্তু যে অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল তা ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। তার মধ্যে একটি বোমা প্যারাশুটে লেগে থাকা অবস্থায় গাছে ঝুলছিল। সেই বোমা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনও কারণ ছিল না। কারণ সে ক্ষেত্রে বোমাটি তখনও সক্রিয় হয়নি।
কিন্তু অন্য বোমার ধ্বংসলীলা থেকে একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছিল উত্তর ক্যারোলিনা। বিস্ফোরণের আগে যতটা সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন, তার প্রায় অর্ধেক সক্রিয় হয়ে উঠেছিল সেটি। ঘণ্টায় প্রায় হাজার কিমি গতিবেগে নীচে নেমে এসেছিল ওই পরমাণু বোমাটি। গোল্ডসবোরোর ভেজা মাটিতে প্রায় ২০ ফুট গভীরে পুঁতে গিয়েছিল। বোমাটির অর্ধেকেরও বেশি সক্রিয় হয়ে গিয়েছিল তখন। খুব সাবধানে বোমার ভিতর থেকে বিস্ফোরক বার করে নিয়ে এনেছিলেন বোমা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভিতরের বেশির ভাগ ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম যত্র তত্র ছড়িয়ে যাওয়ায় সেগুলি সবটা বার করে আনা সম্ভব হয়নি।