Wednesday, December 4, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

রক্তদানে সম্প্রীতির নজির, ফোন পেয়েই ছুটে গিয়ে সদ্যজাত সাকিবের জীবন বাঁচাল শুভেন্দু

নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক সমাচার, বহরমপুর: রক্তের যে কোন ধর্ম হয়না তা আবারও প্রমান হল নদিয়ার এক যুবকের মহানুভবতায়। মাত্র একটি ফোনেই ছুটে এসে এক রত্তিকে রক্ত দিলেন পলাশীর এক কলেজ পড়ুয়া। ধর্ম ভুলে সদ্যজাত সাকিবকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন শুভেন্দু ঘোষ। আর সেই সাথে তিনি অনন্য নজির গড়লেন মানবতার।

নদিয়ার থানারপাড়ার চর নবীনগঞ্জের সাদিফুল বিশ্বাস তার ৫ দিনের সদ্যজাত সন্তানকে সোমবার ভর্তি করেছিলেন মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে। ক্রমশই ছোট্ট সাকিবের শরীরের অবনতি ঘটলে আইসিইউতে নিয়ে যান ডাক্তার বাবুরা। এরপর ডাক্তার সাকিবের পরিবারকে জানান বাচ্চার রক্তের প্রয়োজন। অতি শীঘ্রই সাকিবের জন্য এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে হবে নইলে বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে না। রক্তের গ্রূপ ও-নেগেটিভ। যা সহজে মেলানো মুশকিল। সারাদিন হয়রানি হয়ে খোঁজাখুঁজির পরেও মেলেনি ও-নেগেটিভ রক্ত। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলোতে পজিটিভ রক্তের হাহা কার। সেখানে নেগেটিভ রক্ত! কিভাবে কোথায় পাব! ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাকিবের পরিবার।

শেষমেষ তারা যোগাযোগ করেন নদিয়ার পলাশীর ইমার্জেন্সি ব্লাড সার্ভিস টিমের সঙ্গে। ফোনে বাবার কাতর আর্তি, আমার সন্তানকে বাঁচান দাদা। ও-নেগেটিভ রক্ত লাগবে। সভাপতি ওসমান গনি খানের নেতৃত্বে পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে টিম ইবিএস। ১০ মিনিটের মধ্যেই ওসমানের ডাকে সাড়া দেন পলাশীর তরুণ শুভেন্দু ঘোষ।

আর দেরি নয়। রাত্রি সাড়ে সাতটা নাগাদ শুভেন্দুকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন ওসমান মতিন ফারুক রাকেশ’রা। রাত্রি ৯ টা নাগাদ সাকিবের পরিবারের হাতে এক ইউনিট রক্ত তুলে দেয় শুভেন্দু।

সদ্যজাত ওই শিশুর দাদু শহিদুল ইসলাম বলছিলেন, ‘এই বিরল গ্রূপের রক্ত কোথায় পাব? কে দেবে? কাকে বলবো বলে যখন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন আমার এক শুভাকাঙ্খীর মাধ্যমে ফোন করি ওসমান ভাইকে। দশ মিনিট পরেই তিনি জানালেন ডোনার নিয়ে আসছি চিন্তা করবেন না। রাত আটটায় দেখি দেবদূত হয়ে হাসপাতালে চলে এসেছেন শুভেন্দু ও ওসমান ভাই। শুভেন্দুর এই অবদান কখনোই ভুলবো না।’ পরিজনের আরও বক্তব্য, বিনোময়ে পয়সা নেওয়া তো দূরের কথা, চায়ের দামটাও দিতে দিল না ওরা।

আইটিআই এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শুভেন্দু ঘোষ। আগেও ক্যাম্পে গিয়ে রক্ত দিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তার বক্তব্য, আমি তো তখন মাঠেই ছিলাম। ওসমান ভাইয়ের ফোন পেয়ে আর সময় নষ্ট করিনি। ৫দিনের ওইটুকু বাচ্চা বলে কথা। আমার এক ইউনিট রক্তে একটি ছোট্ট শিশুর প্রাণ ফিরে পেল জেনে আনন্দিত হচ্ছি। এদিকে ছেলের রক্তের বিনিময়ে যে একটি মায়ের কোল ভরে গেছে শুনে গর্বিত শুভেন্দুর মা বাবাও।

ইবিএস এর টিম লিডার ওসমান গনি খান জানিয়েছেন, আজ আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় সেটা অবশ্যই উপরওয়ালার কৃপায় একটা সাকিব’কে হয়ত ফেরানো গেল। তবে বিশ্বাস করুন প্রতিদিন ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে গেলে দেখতে পাবেন শত শত সাকিব, সৌরভরা রক্তের অভাবে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিচ্ছে। আমরা সকলে যদি একটু একটু করে এগিয়ে আসি এমন হাজারো সাকিব, সৌরভদের হয়ত ফিরিয়ে আনতে পারব।

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!