Friday, November 22, 2024
Latest Newsফিচার নিউজসম্পাদকীয়

হয়েছিল রথযাত্রা, সঙ্গে মিষ্টিমুখ! এরপরও নির্দোষ সবাই, মসজিদ কি আত্মহত্যা করেছিল?

সামাউল্লাহ মল্লিক

২৮ বছরের অপেক্ষা শেষ। অবশেষে এল বাবরি ধ্বংস মামলার রায়। পূর্বপরিকল্পিত নয় বাবরি মসজিদ ধ্বংস, রায়ে জানালেন বিচারক। অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবানি সহ একদা শীর্ষ বিজেপি নেতারা। সবাইকেই বেকসুর মুক্ত করল বিশেষ সিবিআই আদালত। আইনজীবী কেকে মিশ্র যিনি ৩২ জনের মধ্যে ২৫ জনের সওয়াল করছিলেন, তিনি জানান যে সবাইকে নির্দোষ বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘটনা নিয়ে যে লম্বা আইনি লড়াই চলছিল, তার এদিন সমাপ্তি ঘটল বলে তিনি জানান।

এই পরিস্থিতিতে তেমন কিছুই বলার নেই। আবার বলতে শুরু করলে….। আমি একথাও বলতে চাইনা যে, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ আদবানি বলেছিলেন, “আজই করসেবকদের শেষ দিন। আজ করসেবকরা শেষবারের মতো করসেবা করবেন।” আমি এও বলব না যে, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯২ অশোক সিংহল সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, “মন্দির নির্মাণে যেকোনও বাধা আসবে আমরা তা দূর করে দেব। করসেবা শুধু ভজন-কীর্তনের জন্য না, বরং মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য।” আমি এটাও বলব না যে, ৬ ডিসেম্বরের দিন রামকথা কুঞ্জে তৈরি মঞ্চ থেকে সিংহল বলেন, “রামলালা আমরা এসেছি, মন্দির ওখানেই হবে। একধাক্কা আরও দাও, বাবরি মসজিদ ভেঙে দাও।”

আমি বলব না, বিজেপি নেতা ও আরএসএস-এর প্রচারক বিনয় কাটিয়ার ৬ ডিসেম্বর নিজের বক্তৃতায় বলেছিলেন, “আমাদের বজরঙ্গিদের উৎসাহ সামুদ্রিক ঝড়ের থেকেও এগিয়ে গিয়েছে। যা একটি না, বরং সমস্ত বাবরি মসজিদকেই ধ্বংস করে দেবে।” আমি এও বলব না যে, ঘটনার পরে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং বলেছিলেন, “আদালতে মামলা করতে হলে আমার নামে করুন। তদন্ত কমিশন বসাতে হলে, আমার বিরুদ্ধে বসান। কাউকে শাস্তি দিতে হলে আমাকে দিন। দুপুর ১টায় গৃহমন্ত্রী শঙ্কররাজ চৌহান আমাকে ফোন করেছিলেন, আমি বলেছি আমার কথা রেকর্ড করে নিন। আমি গুলি চালাব না, আমি গুলি চালাব না।”

কল্যাণ সিং নিজে বলেছিলেন, মসজিদ ধ্বংসের জন্য তিনিই দায়ী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, অপরাধীদের দোষ কবুলের পরও তা বিশ্বাস করতে নারাজ আদালত। বাবরি ধ্বংস মামলাটিকে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অনন্য একটি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা উচিত। কেননা এই মামলার দোষীরা দোষ কবুল করলেও আদালত তাদের মুক্তি দিয়ে বলছে, না আপনারা নির্দোষ। যদিও একথা বিশ্ব জানে যে, বাবরি যখন ভাঙা হচ্ছিল, তখন দিকে দিকে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছিল। আদবানিতো গোটা দেশে রথযাত্রা বের করেছিলেন। ৩২ জনের মধ্যে ৩২ জনই নির্দোষ! অপরাধী কেউ না, মসজিদ নিজেই আত্মহত্যা করেছিল।

Leave a Reply

error: Content is protected !!