সুরাইয়া খাতুন
কেরলের অন্তঃসত্ত্বা হাতিটাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, শুনে সবাই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে। মনে হচ্ছে, যারা এই অমানবিক কাজটা করেছে, তাদের সামনে পেলে ছেড়ে কথা বলবে না। আমিও একে সমর্থন করি। একটা নিরীহ প্রাণীর মৃত্যু, তাও আবার অন্তঃসত্ত্বা! রক্ত টগবগ করে ফুটবে বৈকি!
এই পশুপ্রেমী মানুষদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই। আপনারা যে এতটাই পশুপ্রেমী, সেটা ভালো কথা। কিন্তু মানবপ্রেমী হয়ে উঠতে পারেন না কেন? আপনাদের এই প্রতিবাদ এত শৌখিন ও একপেশে হয় কেন?
নিরীহ পশুটির মতো কত নিরীহ মানুষকে মারা হয়, লিঞ্চিং হয়, ফ্রিজে মাংস রাখার অপরাধে পিটিয়ে মারা হয়, চোর অপরাধে পিটিয়ে মারা হয়, মুসলিম ও দলিত হওয়ায় পিটিয়ে মারা হয়, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন আপনারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন কেন?
আখলাক, তাবরেজ আনসারি, পেহেলু খান এদের মৃত্যু কেন আপনাদের প্রতিবাদী করে তুলতে পারে না! পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনের তলায় পিষে যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ নেই কেন? এন আর সি র দরুণ কত মানুষ আত্মহত্যা করল। এর জন্য দায়ী যারা, তাদের কেন শাস্তির দাবি ওঠে না? তারা কি পশুরও অধম?
নোটবাতিলের সময় মরে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য প্রতিবাদ করেছেন কেউ? অপরাধীর শাস্তি চেয়েছেন? যারা সুকৌশলে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে ও প্রতিবাদ হয় না কেন? করোনা মোকাবিলায় ডাক্তার কাফিল খানের মুক্তির দাবি ওঠে না কেন? কিংবা বিষাক্ত সাপের মত ছোবল মারা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন না কেন?
যদি গর্ভবতী হওয়ার দরুণ আপনারা এতো উত্তাল হন, তাহলে বলি সম্প্রতি মুম্বাইয়ে গর্ভবতী মুসলিম মহিলাকে ৩ টি হসপিটাল ভর্তি নেয়নি। অবশেষে রিক্সাতে স্বামীর কোলে মাথা রেখে প্রাণ গেল গর্ভবতী স্ত্রীর। আর এক গর্ভবতী সফুরা জারগার তিহাড় জেলে পচছে। এদের বেলা প্রতিবাদ আসে না কেন?
আমাদেরও এরকম এক অদৃশ্য আনারস খাওয়ানো হচ্ছে, যার ফলে আমাদের শুভ বুদ্ধি, মানবিকতা, একতা, ভ্রাতৃত্ব মরে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী যারা, তাদের শাস্তির দাবি করা হোক!