দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে লড়াই করতে চেয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু ভোট যত এগিয়ে আসছে সে ছবি ক্রমশই ফিকে হতে শুরু করেছে। আর একথা বুঝতে পেরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন। এমনকি অমিত শাহ যিনি নাড্ডাকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন তিনিও হতাশ।
কিছুদিন আগে রাজধানীতে বসে বঙ্গ বিজেপির ব্লুপ্রিন্ট তৈরির কাজ হয়েছে। সেখানে দিলীপ মুকুলের লড়াই সচক্ষে দেখেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে নেতারা এসে মুকুল ও দিলীপকে এক আসনে বসান ভোট জয়ের জন্য। কিন্তু এর ফলেও যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি তা জলের মতো পরিষ্কার।
২০১৯ সালে বাংলা থেকে বিজেপির লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন এসেছিল। আর বলতে বাধা নেই সে আসন ছিল তৃণমূলের নেগেটিভ ভোট। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে মমতা ও তাঁর সহায়ক পি কে টিম ফাঁকফোকর বোঝাতে চেষ্টা চালালেও বিজেপি দলের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোন উৎসাহব্যঞ্জক ছবি আজও চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র বিজেপির রাজ্য সভাপতি কিছু গরম গরম উক্তি ছাড়া। আর সেই সব আলটপকা মন্তব্যের জেরে বিজেপি ক্রমশই ভোটারদের মন থেকে মুছে যেতে চলেছে।
এদিকে মমতার এক একটি মাস্টার স্ট্রোক ক্রমশই বিজেপিকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের পর ব্রাহ্মনদের হাজার টাকা করে ভাতা দানের যতই সমালোচনা হোক না কেন জনমানসে এর প্রতিক্রিয়া ভোট বাক্সে আসবেই। এছাড়া মমতাকে যারা হিন্দু বিরোধী আখ্যা দিতে চেষ্টা করেছিলেন তারাও এখন বিপাকে। কারণ ক’দিন আগেই মমতা ঘোষণা করেছেন তিনি প্রতি দুর্গা পুজো কমিটিকে পুজোর জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান দেবেন যাতে করে বাংলার দুর্গা পুজো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির খাস তালুক খড়গপুরেও দলকে তিনি ধরে রাখতে পারছেন না। সেখানে দল ভেঙ্গে তৃণমূলে যোগদানের মতো ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরে নয় কোচবিহার সহ সমগ্ৰ রাজ্যের ছবি হল বুথ কমিটিগুলি প্রতিদিনই ভাঙছে। আর তা জোড়া লাগাতে সক্ষম হচ্ছে না বিজেপি। ফলে একসময় গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তৃণমূল যখন একটু একটু করে ঘর গোছাতে ব্যস্ত ঠিক তখন বিজেপির ক্ষমতায় আসার আগেই কালনেমির লঙ্কা ভাগ দেখেছেন বাংলার জনগণ।
বাংলার এ সমস্ত খবর সোজা চলে যাচ্ছে বিজেপির দিল্লির দফতরে। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সব দেখে খানিকটা আশাহত। কৃষি বিল নিয়েও বাংলায় ফায়দা তুলতে নেমেছে তৃণমূল দল। বাংলার কাগজগুলোও কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নানা নীতির কথা ফলাও করে ছাপছে। আর তা থেকে বেরিয়ে বিলের সপক্ষে জোরালো সওয়াল করার মতো নেতা বিজেপির বাংলাতে চোখে পড়ছে না।
এবার বাংলার ভোটে কংগ্ৰেস ও বামেদের জোট কিন্তু ভালো ভোটই কাটবে বলে আশা। বিগত লোকসভা ভোটে সে সব ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। আর এই ভোট কাটাকাটিতে আদতে লাভ হবে মমতার তৃণমূলের। উনিশে হাফ বিশে সাফ বলেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই সাফ হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন অবধি তৈরি হয়নি বাংলায়। গ্ৰামে গঞ্জে তৃণমূলের ভোট কমতেই পারে। সরকার ক্ষমতায় থাকলে তা হয়। কিন্তু সেই বেনো জলে মাছ ধরতে গেলে যে সংগঠন প্রয়োজন তা কিন্তু বিজেপির নেই। বিজেপি যে এক্ষুনি ভোট হলে বাংলা দখল করতে পারবে না তা কিন্তু পরিষ্কার।
কারণ লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। সেখানে তৃণমূলকে গদিছাড়া করতে গেলে যে শক্তি অর্জন করতে হবে তা কিন্তু বিজেপির নেই। ভোটের এখনও বেশ কিছুটা দেরি আছে। আর এর মধ্যে তৃণমূলের পজেটিভ ছবি চোখে পড়লেও বিজেপির সে ছবি চোখে আসছে না। উল্টে বলা যেতে পারে যে শক্তি বিজেপি তৈরি করেছিল তা ক্রমশই কমছে। ফিকে হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির বিজয় রথ।
তবে জনতা জনার্দন মনের মধ্যে কি ধরে রাখছেন তা বলা যায় না। তবে মানুষকে ভোট বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলে লাগে সংগঠন। কাগজে কলমে নয় বাস্তবের মাটিতে। তবে বঙ্গের এই মুহূর্তের ছবি বিজেপির পক্ষে খুব একটা সুখ পদ নয়।