প্রথম দৃশ্য
ঘোষক : প্রিয় এলাকাবাসী। আজ এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভায় বক্তব্য রাখবেন পরিপার্টির নেতা পরিমল ঘোষ, সংখ্যালঘু সেলের নেতা আব্বাস মস্তান ও আরও অনেকে। এই জনসভায় দলে দলে যোগ দিন।
ঘোষক : আজকের জনসভায় দলে দলে যোগ দিন।
সবাই : যোগ দিন, যোগ দিন।
ঘোষক : পরিমল ঘোষের জনসভায় দলে দলে যোগ দিন।
সবাই : যোগ দিন, যোগ দিন।
ঘোষক : সংখ্যালঘু নেতা আব্বাস মস্তানের জনসভায় দলে দলে যোগ দিন।
সবাই : যোগ দিন, যোগ দিন।
দ্বিতীয় দৃশ্য
ঘোষক : হ্যালো চেক, হ্যালো চেক। বন্ধুগণ, আজকে এই জনসভার আয়োজন করা হয়েছে, কারণ – দ্রব্যমূল্য ও নাশকতামূলক কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া অনুপ্রবেশ, রাজনৈতিক হানাহানি এইসব বিষয়ে আমাদের নেতারা আলোকপাত করবেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সভার কাজ শুরু হবে।
জনৈক : ঘোষকের কানে কিছু বললেন।
ঘোষক : (খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে) আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের নেতা পরিমল ঘোষ সড়কপথে আসছিলেন। তাঁর গাড়ির উপর নাশকতামূলক হামলা হয়েছে। তিনি কেমন আছেন আমরা জানি না, তাই সভা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয় দৃশ্য
(দুর্ঘটনাস্থল – পুলিশ – ড্রাইভার – পরিমল ঘোষ – আব্বাস মস্তান – ক্যামেরাম্যান – সাংবাদিক – নিরানন্দ টিভি স্টুডিও)
পুলিশ : বলুন পরিমল বাবু, আপনার গাড়ির এক্সিডেন্ট কিভাবে হল?
পরিমল : আমি কি বলব? ড্রাইভার বলতে পারবে।
সাংবাদিক : হ্যালো, হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আমরা সরাসরি সর্বপ্রথম দেখাচ্ছি যে জায়গায় পরিমল বাবুর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। আমাদের সাংবাদিক ঘটনাস্থলে আছেন। হ্যালো…..
সাংবাদিক : শুনতে পাচ্ছি।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যাঁ, গাড়ি কিভাবে দুর্ঘটনায় পড়ল বলো।
সাংবাদিক : যে এলাকায় গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে দেখাচ্ছি।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : দেখাও ছবি, আমরা প্রথম লাইভ টেলিকাস্ট করছি নিরানন্দ টিভিতে।
সাংবাদিক : দেখতে পাচ্ছ? এখান থেকে গাড়ি যাচ্ছিল।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : দেখতে পাচ্ছি।
সাংবাদিক : এখানে গাড়ি স্লিপ করে যায়, এর পাশে গভীর খাদ দেখতে পাচ্ছ
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : কত গভীর খাদ হবে? বিস্তারিত বললে দর্শক জানতে পারত।
সাংবাদিক : খাদ বলতে রাস্তা মেরামতের জন্য মাটি কাটা হয়েছিল।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : তুমি ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো।
সাংবাদিক : এই দেখো, প্রায় তিন ফুট মাটি কাটা হয়েছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : রাস্তা প্রায় ৬ ফুট উঁচু।
সাংবাদিক : হ্যাঁ প্রায় ৯-১০ ফুট গভীর হবে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে জিজ্ঞাসা করো।
সাংবাদিক : (এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা) আপনি বলুন, কি দেখেছেন?
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, হ্যালো… লাইন কেটে গেল। লাইন পেলে আমরা আবার সরাসরি দেখাব।
ড্রাইভার : কিভাবে স্লিপ করে গেল বুঝতে পারছিনা।
পুলিশ : তুমি গাড়ি চালাচ্ছিলে, তুমি না বুঝলে চলবে? বলো, বলো।
ড্রাইভার : গাড়ির সামনে দিয়ে একজন ব্যক্তি দৌড়ে ঐদিকে গেল।
পুলিশ : ও কিছু করেনি তো?
ড্রাইভার : কিছু একটা ফেলে পালালো।
পুলিশ : খুঁজে দেখো, কি ফেলে গেল ও কোনদিকে পালালো। (একজন খুঁজতে লাগল)
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, হ্যালো… বলো অধীর দা, প্রত্যক্ষদর্শী বা অফিসাররা কি বলছে?
সাংবাদিক : এই মাত্র জানা গেল, গাড়ির সামনে এক ব্যক্তি কিছু ফেলে পালিয়েছিল।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আপনার নিরানন্দ টিভিতে সরাসরি দেখছেন, এই মাত্র জানা গেল, গাড়ির সামনে এক ব্যক্তি কিছু ফেলে পালিয়েছিল।
সাংবাদিক : ঐদিকে পালিয়েছে, ওখানে একটা মাদ্রাসা আছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো, তাঁর বিষয়ে কিছু জানা যায় কিনা।
সাংবাদিক : (একজন স্থানীয়কে ধরে) আপনি বলুন ওই ব্যক্তিকে দেখেছেন?
জনৈক : হ্যাঁ, ওকে মাদ্রাসার আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে।
সাংবাদিক : বড় খবর পাওয়া গেছে, ওই ব্যক্তিকে মাদ্রাসার আসেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আপনারা দেখছেন নিরানন্দ টিভিতে সরাসরি, এখুনি খবর পাওয়া গেল মাদ্রাসা থেকে ওই চক্রান্ত হলেও হতে পারে।
সাংবাদিক : আমি আরো জানার চেষ্টা করছি।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, হ্যালো… যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল যোগাযোগ হলে আবার সরাসরি দেখাবো।
পুলিশ : তুমি এই ব্যক্তিকে মাদ্রাসার আশেপাশে ঘুরতে দেখেছো?
জনৈক : হ্যাঁ স্যার, আমি ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি।
পুলিশ : মাদ্রাসায় গেলে বোঝা যাবে। গাড়ি ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠাও।
তৃতীয় দৃশ্য
(মাদ্রাসা)
পুলিশ : মাদ্রাসার হেড কে আছেন?
ইমাম : বলুন, কি জানতে চান?
পুলিশ : গতকাল পরিমল বাবু গভীর খাদে পড়তে পড়তে রক্ষা পেয়েছেন।
ইমাম : এখানে গভীর খাদ কোথায়? গাড়ির কি হয়েছে আমি কিছু জানিনা।
পুলিশ : সব জানতে পারবেন, আমরা সব বের করে নেব।
ইমাম : কি বের করবেন? কিছু বুঝতে পারছি না!
পুলিশ : বলছি, বলছি। গাড়ি দুর্ঘটনার সময় ওখান থেকে একজনকে পালাতে দেখেছে ড্রাইভার।
ইমাম : ওখানে কে ছিল, তাকে খুঁজুন। মাদ্রাসায় এসেছেন কেন?
পুলিশ : বলছি শুনুন, ওই ছেলেকে মাদ্রাসার কাছে ঘুরতে দেখা গেছে।
ইমাম : মাদ্রাসার কাছে ঘুরতে দেখা গেছে, তার মানে কি?
পুলিশ : গাড়ির সামনে থেকে দৌড়ে মাদ্রাসার দিকে আসা ওই ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করেছি। আপনার মাদ্রাসার এক ছাত্রকে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ।
ইমাম : কেউ কারও সঙ্গে কথা বললে কি প্রমাণ হয়?
পুলিশ : সব প্রমাণ পাওয়া যাবে, সেই ছেলেকে ডাকুন।
ইমাম : মুহিত, মুহিত এখানে এসো।
মুহিত : ওস্তাদজি ডাকছেন আমাকে?
পুলিশ : আমরা ওকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
ইমাম : ও কি করেছে? ওকে থানায় নিয়ে যাবেন?
পুলিশ : চলো, চলো। (মুহিতকে নিয়ে বেরিয়ে গেল)
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, হ্যালো.. অধীর দা শুনতে পাচ্ছ?
সাংবাদিক : হ্যালো শুনতে পাচ্ছি বলো।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আপনারা নিরানন্দ টিভিতে সরাসরি দেখছেন। বলো কামাল দা কি তথ্য পাওয়া গেল?
সাংবাদিক : এই যে মাদ্রাসা দেখতে পাচ্ছ, এখনই এই মাদ্রাসা থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : এই মুহুর্তের সবথেকে বড় খবর। পরিমল বাবুর গাড়ি দুর্ঘটনা মামলায় এক মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাংবাদিক : যে ব্যক্তি পরিমল বাবুর গাড়ির সামনে কিছু ফেলে পালিয়েছিল, তার সঙ্গে মাদ্রাসার ওই ছেলেটির যোগসাজশের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : কিরকম যোগসাজশ? তুমি বলো, আমাদের টিভি দর্শকরা দেখুক।
সাংবাদিক : ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে মাদ্রাসার এক ছাত্রকে কথা বলতে দেখা গেছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আপনারা দেখছেন নিরানন্দ টিভিতে সরাসরি। ওই জঙ্গির সঙ্গে মাদ্রাসার এক ছাত্রের যোগাযোগ আছে।
সাংবাদিক : শুকনো রাস্তায় গাড়ি স্লিপ হয়ে যাওয়ার থেকে এটাই প্রমাণ হচ্ছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : বলো অধীর দা, আর কি কি প্রমাণ পেলে?
সাংবাদিক : রাস্তায় স্লিপ করার মতো বারুদ মাইন ফেলেছিল।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, অধীর দা। স্লিপ করার মতো বারুদ মাইন কি? কিরকম? মানে কিভাবে পাতা হয়?
সাংবাদিক : এই ধরনের বারুদ রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : তা, যে জঙ্গি ওই বারুদ ফেলে পালিয়েছে তার কি খোঁজ পাওয়া গেছে?
সাংবাদিক : হ্যাঁ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে একজন মুসলিম, তাঁর নাম মুহিত। হ্যালো, হ্যালো…
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যালো, হ্যালো… যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগ হলে আবার নিরানন্দ টিভিতে সরাসরি দেখাব।
চতুর্থ দৃশ্য
(থানা)
পুলিশ : তুমি পরিমল বাবুর গাড়ির জন্য বারুদ পেতে ছিলে?
মুহিত : আমি, আমি… বারুদ?
পুলিশ : মুহিত তুমি কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করো?
মুহিত : আমি কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করি না।
পুলিশ : সব খুলে বলো, তোমাদের আর কী কী পরিকল্পনা আছে?
মুনাফ : আমি মাদ্রাসায় পড়ি, আমি কোনও কিছু জানিনা।
পুলিশ : মাদ্রাসার আড়ালে অনেক কিছু করো।
মুনাফ : আমি শুধু কোরআন হাদিস পড়ি।
পুলিশ : জিহাদী বই পড়ানো হয় না?
পুলিশ : মুহিত তুই কেন গাড়ির সামনে বারুদ ফেলেছিস?
মুহিত : আমি কোনও বারুদ ফেলিনি।
পুলিশ : কে তোকে বারুদ দিয়েছিল? ভালই ভালই বলে ফেল।
মুহিত : আমি কিছুই করিনি।
পুলিশ : তাহলে গাড়ির সামনে কি ফেলে পালিয়ে গেছিস?
মুহিত : গাড়ি আমার দিকে ধেয়ে আসছিল।
পুলিশ : কে আছিস? এদের মুখ খোলার ব্যবস্থা কর।
(চেয়ারে বেঁধে রুল দিয়ে মার শুরু হয়)
মুনাফ : আ আ আমি কিছুই জানিনা।
মুহিত : উঃ আঃ আমি কিছুই করিনি।
কনস্টেবল : স্যার জঙ্গীরা খুব শক্ত ধাতুর।
পুলিশ : সব ধাতু আমরা গলাতে পারি।
কনস্টেবল : এত মার খাওয়ার পরও কিছু বলছে না।
পুলিশ : বলবে, বলবে। বলবে না, ওর বাপ বলবে।
কনস্টেবল : স্যার সাংবাদিক এসেছে, কথা বলবে।
পুলিশ : চলো এদের পরে ব্যবস্থা করছি।
সাংবাদিক : স্যার মূল অপরাধী ধরা পড়েছে?
পুলিশ : হ্যাঁ ধরা পড়েছে।
সাংবাদিক : ওর কাছ থেকে কিছু পাওয়া গেছে?
পুলিশ : কিছু জেহাদী বই পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না।
সাংবাদিক : হ্যালো, হ্যালো… শুনতে পাচ্ছ?
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি, বলো অধীর, কি জানতে পারলে?
সাংবাদিক : মূল জঙ্গি ধরা পড়েছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : এই মুহুর্তের সবথেকে বড় খবর। এই মাত্র জানা গেল, মূল জঙ্গি ধরা পড়েছে। আপনারা সরাসরি আমাদের নিরানন্দ টিভিতে দেখছেন।
সাংবাদিক : হ্যালো, হ্যালো শুনতে পাচ্ছ?
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : হ্যাঁ অধীর শুনতে পাচ্ছি। আমাদের টিভি দর্শকদের জানাও প্রকৃত ঘটনা কী?
সাংবাদিক : হ্যাঁ, ওই জঙ্গির কাছ থেকে জেহাদী বই পাওয়া গেছে।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আর কিছু জানা গেল? অফিসার কি বলছেন?
সাংবাদিক : অফিসার তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে নারাজ।
নিরানন্দ টিভি স্টুডিও : আপনার সরাসরি দেখছেন নিরানন্দ টিভি। জঙ্গিদের কাছ থেকে জিহাদি বই পাওয়া গেছে। এর থেকে এটা বোঝা যায় মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হ্যালো, হ্যালো…
সাংবাদিক : হ্যালো, হ্যালো… শুনতে পাচ্ছ? (যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন)
কাগজওয়ালা : জোর খবর, জোর খবর। পড়ুন, পড়ুন – মাদ্রাসায় জঙ্গি ঘাঁটি।
ক্রেতা : ভাই কাকের কন্ঠ পত্রিকা দেন তো।
কাগজওয়ালা : পড়ুন, পড়ুন কাকের কন্ঠ পড়ুন। মাদ্রাসায় জেহাদী বই পাওয়া গেছে।
ক্রেতা : ভাই কাকের কন্ঠ কাগজ আছে?
কাগজওয়ালা : পড়ুন ১৪ পৃষ্ঠার কাকের কন্ঠ। ধৃত দুই জঙ্গি।
ক্রেতা : আমাকে একটা কাকের কন্ঠ পত্রিকা দিন।
কাগজওয়ালা : জোর খবর, জোর খবর। পড়ুন, পড়ুন – ধৃত জঙ্গি জেল হেফাজতে।
পঞ্চম দৃশ্য
(১১ বৎসর পর আদালতে)
বিচারক : সমস্ত সাক্ষী ও প্রমান দেখে আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, অভিযুক্ত মুহিত ও মুনাফ নির্দোষ। তাদের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরিমল বাবুর গাড়ি স্লিপ করে গিয়েছিল, তাতে কোন বারুদ পাওয়া যায়নি। গাড়ির স্লিপ করে গিয়েছিল কারণ, সেই সময় গাড়ির ড্রাইভার ঘুমের ঘোরে গাড়ি চালাচ্ছিল। এখানে কোনও গভীর খাদ ছিল না, রাস্তা মেরামতের জন্য মাটি কাটা হয়েছিল। স্লিপ করার মতো কোনও বারুদ আসলেই হয় না। অভিযুক্ত মুহিত সামনে থেকে কিছু ফেলে পালিয়েছিল বলে যে অভিযোগ করা হয়েছিল, আসলে ওইদিন সে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে এসেছিল। ঘটনার আগে, এক-দুদিন মুনাফের সঙ্গে দেখা করে জেনে যায়, কবে ভর্তির তারিখ। ভর্তির দিন মাদ্রাসায় কলা রুটি খেতে দেওয়া হয়েছিল। মুহিত বসে কলা রুটি খাচ্ছিল। পরিমল বাবুর ড্রাইভার ঘুমের ঘোরে মুহিতের দিকে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। তাই দেখে মুহিত কলা রুটি ফেলে পালায়। ড্রাইভার চোখ খোলার পর দেখে, প্রায় সামনে মুহিত ও গর্ত। সে খুব জোরে ব্রেক কষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ফলে সামনের চাকা কলার খোসার ওপর পড়ে, সেই কারণেই গাড়ি স্লিপ করে যায়। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, গাড়ির চাকায় কলার খোসা পাওয়া গেছে। তাই অভিযুক্ত মুহিত ও মুনাফকে বেকসুর খালাস করা হল। আদালতের কাজ শেষ করা হল।
শেষ দৃশ্য
(জেল থেকে বেরিয়ে মুহিত ও মুনাফ খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটছে)
মুনাফ : ভাই কেন আমাদের ১৩ বৎসর শেষ হল?
মুহিত : আমাদের দোষ, আমরা মুসলমান।
মুনাফ : জমানার জালেমরা আমাদের মতো কত ভাইয়ের মূল্যবান সময় কেড়ে নিয়েছে।
মুহিত : মিল্লাত কবে জাগবে? কবে এর প্রতিকার হবে?
(দুজনে গান শুরু করে)
মিল্লাত কবে জাগবে?
মিল্লাত কি জাগবে না?
আমরা আঁধারে হারিয়ে যাবো,
মিল্লাত কিছু ভাববে না?
মিল্লাত কবে জাগবে….
জুলুমের পাহাড় আসে নেমে,
আঁধার কুঠুরির বাসে
নির্দোষ সাজা পায়,
অপরাধীর সাজে
মিল্লাত কবে জাগবে?
মিল্লাত কি জাগবে না?
আমরা আঁধারে হারিয়ে যাবো,
মিল্লাত কিছু ভাববে না?
হতাশায় ভুগে হারিয়েছি মান
সম্মান ফিরে পাবো মানলে কুরআন
মিল্লাত কবে জাগবে?
মিল্লাত কি জাগবে না?
আমরা আঁধারে হারিয়ে যাবো,
মিল্লাত কিছু ভাববে না?
পথ হারা মিল্লাত কে দেখাবে পথ?
রুখতে জুলুম নাও শপথ
মিল্লাত কবে জাগবে?
মিল্লাত কি জাগবে না?
আমরা আঁধারে হারিয়ে যাবো,
মিল্লাত কিছু ভাববে না?
দিশেহারা মিল্লাত দিশা পেতে চায়
কে দেখাবে পথ ভাই কে দেখাবে পথ?
মিল্লাত কবে জাগবে?
মিল্লাত কি জাগবে না?
আমরা আঁধারে হারিয়ে যাবো,
মিল্লাত কিছু ভাববে না?
নাটকটি লিখেছেন – আব্দুর রহমান খান