Thursday, September 19, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

গ্রেফতার করা যাবে না ‛আরামবাগ টিভি’র সম্পাদক ও সাংবাদিককে, নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, আরামবাগ : আরামবাগ টিভির সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও সাংবাদিক সুরজ আলি খান-এর বিরুদ্ধে করা মামলায় জোর ধাক্কা খেলো রাজ্যের পুলিশ। দু’টি এফআইআর হলেও গ্রেফতার করা যাবে না তাঁদের। মঙ্গলবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক।

ঘটনার সূত্রপাত রাজ্য সরকারের একটি প্রকল্পের খবর সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে। গত ১৩ই এপ্রিল আরামবাগ টিভিতে একটি খবর সম্প্রচার হয়। যেখানে দেখানো হয় রাজ্য সরকারের খেলাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আরামবাগ ব্লকের ৫৭টি ক্লাবকে থানা থেকে এক লক্ষ টাকা করে চেক বিতরণ করা হচ্ছে। মূলত সেই খবর সম্প্রচার করাকে কেন্দ্র করে আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ইসলাম এবং সাংবাদিকদের সুরজ আলি খান-এর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে আরামবাগ থানার পুলিশ।

মামলায় বলা হয় আরামবাগ টিভি নাকি ভুয়ো খবর সম্প্রচারিত করেছে। অথচ সেই থানার পুলিশ আবার স্বীকার করেছে এপ্রিল মাসের ১১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত থানা থেকে ক্লাব গুলিকে চেক বিতরণ করা হয়েছে। পুলিশের করা এই মামলার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। পাশাপাশি সুমন্ত যশ নামে এক সরকারি কর্মচারী আরামবাগ মহিলা থানায় আরামবাগ টিভির সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

ওই অভিযোগকারী ব্যক্তি সরকারি আধিকারিক হওয়া সত্ত্বেও করোনা আবহে মাক্স না পরার যুক্তি দিয়েছিলেন। সেই খবর সম্প্রচার হওয়াতে ওই ব্যক্তির নাকি মানহানি হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই তিনিও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও এই দুটি অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগে, অভিযোগকারীদের তরফে আরামবাগ টিভিকে কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি। যেটা তাদের আইনত ভুল বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। এর পরেই দুটি এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন আরামবাগ টিভির সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলাম।

গত মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে এই মামলার দীর্ঘ শুনানি হয়। আরামবাগ টিভির পক্ষ থেকে আদালতে সওয়াল করেন বিশিষ্ট সিনিয়র আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শামীম আহমেদ, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, পিন্টু কারার, অরূপ হাজরা। আদালতে বিকাশবাবু বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আরামবাগ টিভিকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ যেখানে শিকার করছে থানা থেকে ক্লাবগুলোকে চেক বিতরণ করা হয়েছে, অথচ সেই খবর দেখানো ভুয়ো বলে এফআইআর করছে পুলিশ। এটা কিভাবে সম্ভব?

এ বিষয়ে আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জী ও শামীম আহমেদ বলেন, এর আগে ঠিক সন্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল। এ রাজ্যের পুলিশ এভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। আমরা আদালতের কাছে সে বিষয়টি তুলে ধরেছি। দীর্ঘ শুনানির পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়ে বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনওভাবেই আরামবাগ টিভির সম্পাদক ও সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যাবে না।

তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন পড়লে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিশ। তবে তার জন্য আদালত আগামী ৯ তারিখ দিন ধার্য করেছে। ঐদিন থানায় গিয়ে পুলিশের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সম্পাদক সাংবাদিককে। তবে কোনোভাবেই তাদের গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিশ। এই এফআইআর-এর বাস্তবতা নিয়ে আগামী ৬ সপ্তাহ পর শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে। তার আগে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তার দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাবী হলফনামা জমা দেবেন আরামবাগ টিভির আইনজীবীরা।

আদালতের এই নির্দেশ কে প্রাথমিক জয় বলে মনে করছেন আরামবাগ টিভির সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত এই মামলায় জয়ী হব। কারণ ষড়যন্ত্র করে কাউকে হারানো যায় না। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা যায় না। সত্য ঠিক একদিন বেরিয়ে আসবে।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!