Thursday, February 6, 2025
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

রাজনৈতিক হিংসায় জড়িয়ে না পড়ে শিক্ষিত হোন, সমাজ নিয়ে ভাবুন, আহ্বান অধ্যাপক সাইফুল্লাহর

নিজস্ব প্রতিনিধি, দৈনিক সমাচার, কলকাতা: রাজনৈতিক হিংসায় জড়িয়ে না পড়ে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করুন এবং সমাজ নিয়ে ভাবুন। এমনটাই আহ্বান জানালেন মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মুসলিমদের লেঠেল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। কিন্তু মেলেনি সাংবিধানিক অধিকার। বঞ্চনার পর বঞ্চনা সহ্য করে রাজনৈতিকগুলিকে ভোট দিয়েছে। শাসন করেছে যারা তাদের কাউকে মরতে হয়নি, জীবন দিতে হয়েছে, মামলা বইতে হয়েছে শোষিত মুসলিম সমাজকে। সচেতন মুসলিম নেতারা বারবার রাজনৈতিক হিংসা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিভিন্ন দল এমন রাজনৈতিক খেলা শুরু করেছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বেরুনো যাচ্ছে না। একের বিরুদ্ধে অন্যজনকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম সমাজের লাভ কিছু হয়না। আরও আশ্চর্যের, মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি বুঝতেই চাইনা বা বঞ্চনার ইতিহাস জেনেও ‘কিছু করার নেই’ ভেবে প্রচলিত রাজনৈতিক দলের দশকের পর দাসত্ব করছে। জাতি, সমাজের চেয়ে দলের উপরতলার নেতাদের নির্দেশ মানছে। আগামী ২০২১ সালের নির্বাচন নিয়ে এখন থেকে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায়, মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, যেই ক্ষমতায় আসুক রাজনৈতিক হিংসার প্ররচনায় যেন মুসলিমরা পা না দেন। এখন প্রয়োজন, নিজেদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করা, সমাজ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখা এবং রাজনৈতিক সচেতন হওয়া।

এ প্রসঙ্গে আলিয়া ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল্লাহ জানান, “পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমান সমাজের সামনে এখন যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হল রাজনৈতিক খুনোখুনি-তে জড়িয়ে পড়া। আমাদের দেশের রাজনীতির সাথে যাদের সামান্যতম পরিচয় আছে, তারা ভালোভাবে’ই জানি এই ধরণের হানাহানি’র ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেউ পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ে। এই সুবিধাভোগী সম্প্রদায়ের যুপকাষ্ঠে বলি হতে হয় এই মানুষগুলিকে এবং যেকোনো পরিসংখ্যান থেকে সুস্পষ্ট হবে যে এক্ষেত্রে মুসলিম সমাজের মানুষই বেশি প্রাণ হারাচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর বিনিময়ে তারা কিছুই পাচ্ছে না।”

সাইফুল্লাহ আরও বলেন, “যারা ফল ভোগ করার তারা নিরাপদ আশ্রয়ে বসে ফল ভোগ করছে। এটা আর কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না। সীমাহীন সমস্যায় নিমজ্জিত সমাজকে রক্ষা করতে হলে এখান থেকে তাদেরকে বের করে আনতেই হবে এবং সে পথে অবশ্য’ই অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো নিরক্ষরতা,বোধের অভাব। এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মাঝে আমাদের নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। আমরা মানুষগুলো’র পাশে দাড়িয়ে দিনের পর দিন বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো, যে তারা যে খুনোখুনি করছে তার পরিণতিতে কার কতটা লাভ হচ্ছে। যাদের তোমরা খুন করছো পরবর্তীতে তার ছেলেরাও বদলা নিতে মরিয়া হয়ে উঠবে। এভাবে রক্তাক্ত হওয়াটাই আমাদের ভবিতব্য হয়ে উঠবে। এর কোনো লাভ আমাদের হবে না। কাজেই আমরা এই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার বা সচেতনতা থেকে ভোট দেবো। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমরা কিছু করবো না। যারা রাজনীতি নিয়ে করে খায় তারা খুনোখুনি, হানাহানি যা করে করুক। আমরা যারা রাজনীতির কোনো রস আস্বাদ করি না, যারা শুধুই ভোট দিই, তারা কেন এভাবে হানাহানি করবো! এগুলো আজ মানুষে’র কাছে গিয়ে বলতে হবে। যতদিন না তারা বুঝবে, ততদিন আমাদের অক্লান্তভাবে বলতে হবে। যদি আমরা একাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে একদিন আমরা নিশ্চয় সফল হবো। সেদিন আমাদের সমাজের মানুষ বুঝতে পারবে যে এই ভুল থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। যতদিন তারা সেই ধারণায় না পৌঁছায়, ততদিন যারা একটু বোধসম্পন্ন মানুষ, তাদেরকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব যেন রাজনৈতিক হানাহানির স্বীকার না হয়, এই অঙ্গীকার আমরা করবো নিজেদের কাছে, সমাজের কাছে। একদিন আমরা অন্ধকারের জাল ছিড়ে আলোর ভূবনে প্রত্যাবর্তন করবোই।”

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!