মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন, কলকাতা: আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের সাম্প্রতিক প্রকাশিত রিপোর্ট সাড়া জাগিয়েছে ভারতে। ভারতের প্রচারমাধ্যমগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুধা সূচকে ১০৭ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান যখন ৯৪-এ এসে দাঁড়ায় তখন তা উদ্বেগের কারণ বৈ কী। কিন্তু ভারতীয় নাগরিকদের কাছে এই উদ্বেগ আরো বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। এ কারণে যে সবকটি প্রতিবেশী দেশ ক্ষুধা সূচকে ভারতের থেকে ভালো অবস্থানে আছে। যেমন শ্রীলংকা ৬৪, নেপাল ৭৩, বাংলাদেশ ৭৫, মায়ানমার ৭৮, এমনকি পাকিস্তানের মতো দেশ ও ৮৮ তে আছে। যেখানে ভারতের র্যাঙ্ক ৯৪। ভারতের পিছনে আছে শুধুমাত্র রুয়ান্ডা ৯৭, নাইজেরিয়া ৯৮, আফগানিস্থান ৯৯ ইত্যাদি দেশ।
এই রিপোর্টে উদবিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারন আছে। তাই এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে। ভারতের অর্থনৈতিক করুন অবস্থার কারণ কি এবং তা থেকে উত্তরণের পথ কী তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ চলতেই থাকবে। অর্থনৈতিক মন্দার দায় থেকে সরকার নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারেনা। এ পর্যন্ত সরকারের মনোভাব দেখে এটা উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে সরকার করোনা মহামারীকে দায়ী করে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চাচ্ছে। অর্থাৎ জনগণকে এটা বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের সব রকমের যোগ্যতা তাদের ছিল এবং তারা উন্নয়নের সবরকম চেষ্টা করা সত্ত্বেও আকস্মিকভাবে আগত মহামারীর কারণে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়নি। ক্ষুধা-সূচকে ভারতের স্থান নেমে যাওয়ার এটাই অন্যতম কারণ। অর্থাৎ দেশের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দায়ভার তারা কোনোভাবেই ঘাড়ে নিতে চাইবে না। কিন্তু বিষয়টা কি সেইরকম? করণা মহামারীর আক্রমণ কোনো দেশকে ছাড় দেয়নি। আমাদের প্রতিবেশী দেশের কেউ করোনা মহামারি থেকে মুক্ত থাকেনি। তারপরও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেন অন্য দেশের থেকে আরও খারাপ হয়ে গেলো? সেটা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। কেননা এটা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার প্রভাব থেকে কেউ মুগ্ধ থাকতে পারবে না।রাজনৈতিক কাদা ছোড়া-ছুড়ি যে যাই করুক না কেন জাহাজ ডুবলে যাত্রীদের সকলকেই ডুবতে হবে। তাই আমাদেরকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে আমাদের দেশের এই অর্থনৈতিক রোগের পিছনে কারণ কি। এটা স্বাভাবিক বিপর্যয়? না পরিকল্পিতভাবে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশের মধ্যে এই ধরনের সংকট তৈরি করা হচ্ছে কি-না সেটাও ভেবে দেখা দরকার।
আমরা যদি একটু পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূলে শুধুমাত্র করণা মহামারীর আগ্রাসন নয় বরং আরো অনেক কারণ আছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় উন্নয়ন করার কথা বললেও তার একের পর এক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ ভারতকে উন্নয়ন নয় বরং অবনয়নের দিকে ঠেলে দিয়েছে দিনের পর দিন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন যোগ্যতা বা পরিকল্পনা এই সরকারের আছে বলে মনে হয়নি। বরং তারা শুধু বাগাড়ম্বর দিয়ে দেশের হাড়ির হালকে আড়াল করতে চেয়েছে মাত্র এবং সেই ফাঁক দিয়ে ভারত আরো দ্রুত পিছনের দিকে চলে যা চ্ছে।
করোনা ও লকডাউন
প্রথমেই করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন প্রসঙ্গে আসা যাক। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায়- বিশেষ করে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, আমেরিকা, চীন এই সকল দেশের তুলনায় করোনা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ভারত অনেক বেশি পেয়েছে। তারপরও দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে কিভাবে করোনার মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে কোনো যথাযোগ্য পরিকল্পনা সরকার করেছে বলে মনে হয় না। বরং কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে নমস্তে ট্রাম্প ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যার ফলে আমাদের দেশে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য অর্থনীতিবীদ, বিজ্ঞানী, ডাক্তারদের মত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কেন্দ্রীয় সরকার থালা বাজাও, তালি বাজাও, জনতা কারফিউ ইত্যাদি কুসংস্কারের রাস্তায় হেঁটেছে। তারপরের ধাপেই চমক সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত দেশের কোটি কোটি শ্রমিকদের উপর আকস্মিক লকডাউনের চাবুক মারা হয়েছে। যার ফলে পারিযায়ী শ্রমিকদের জীবন দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে সাংঘাতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দেশ। ভারত ছাড়া জী-২০-র অন্তর্ভুক্ত কোন দেশে এই ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা যায়নি। এইরকম লকডাউনের কারণে দেশের সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিল্প ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে। গরীব শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ীরা সাংঘাতিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। অপরদিকে দেখা গেছে যে সরকারের এই পদক্ষেপ কর্পোরেট সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানিদের সুবিধা করে দিয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে আর আঙ্গুল ফুলে কলা-গাছ হয়েছে ভারতের হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থার। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যায় যে কাদের সুবিধা হচ্ছে আর কারা বিপদে পড়ছে। এমনি এমনি এসব হচ্ছে এমনটা ভাবা খুবই কষ্টকর। সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের জনগণগণকে লুঠ করে একটি বিশেষ শ্রেণিকে পাইয়ে দেওয়ার লক্ষণ খুবই স্পস্ট।
ব্যাংক জালিয়াতি
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার এই দুর্গতির পিছনে শুধু করোনা পরিস্থিতি দায়ী নয়। করোনা মহামারী আসার আগে থেকেই ভারত অর্থনৈতিক দেউলিয়ার দিকে এগোচ্ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রশ্রয়ে ভারতে একের পর এক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। যে দেশে কৃষকরা ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে ব্যাংকের চাপে পড়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। যেখানে একজন ছোট ব্যবসায়ীকে কোন সম্পত্তি মর্টগেজ না রাখলে বা কোন গ্যারান্টার না পেলে ঋণ দেওয়া হয়না সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জালিয়াত।
নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দিয়েছিলেন “না-খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা”। তিনি নিজেকে দেশের চৌকিদার হিসাবে প্রচার করেছেন। অথচ তার আমলে একের পর এক ললিত মোদী, বিজয় মালিয়া, নিরব মোদী, মেহুল চস্কি ইত্যাদি প্রায় ৩৮ জন ব্যক্তি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ঋণ আদায় না করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এটা কোন সরকারের অসতর্কতা বা অসাবধানতা বলে মনে হয়না। এর পিছনে আরো বড় কারণ থাকতে পারে এবং আরো বড় দুর্নীতির সঙ্গে যোগ সুত্র থাকতে পারে। রাজনৈতিক নেতা, শাসকদলের প্রশ্রয়ে ব্যাংক লুট করার এ এক নব কৌশল হতে পারে। যাই হোক, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের এটা একটা অন্যতম কারণ। এখানেও সমানভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই গরীব মানুষরা আর লুটপাট করে আখের গুছিয়ে নিচ্ছে সেই মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনকুবের। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। সরকার একজন কৃষকের ঋণ মুকুব করার ক্ষেত্রে নানান বাহানা দেখায়। কিন্তু পুঁজিপতিদের হাজার হাজার কোটি টাকা এক কলমের খোঁচায় ঋণ মুকুব হয়ে যায়। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে না?
নোট বাতিল
নরেন্দ্র মোদী দেশকে কালোটাকা মুক্ত করার জন্য আকস্মিকভাবে বড় অংকের টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন। তার এই রাতারাতি নোট বাতিলের ঘোষণা দেশজুড়ে সাংঘাতিক সংকটময় পরিস্থিতি ডেকে আনে। তারপরও তিনি জনগণকে হাতজোড় করে বলেছিলেন মাত্র ৫০ টা দিন সময় তাকে দেয়া হোক আর তিনি সব পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে কি লক্ষ্য করা গেল? যে কালো টাকা উদ্ধার করার জন্য নোট বাতিল করা হয়েছে নতুন নোট বাজারে আসার আগেই তা গাড়ি গাড়ি শাসক দলের নেতাদের অধীনে ঘুরতে লাগলো। কালোটাকা দূর করা তো দূরের কথা বরং কালোটাকার মাত্রা আরও বেড়ে গেল। এক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত হলো সেই সাধারন গরিব মানুষ। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ ধনকুবেরদের। রিপোর্টে জানা যায় শুধু নোট বাতিল করার কারণে আচমকা ভারতের দু-কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম বলেছেন ভারতের অর্থনীতি সাংঘাতিকভাবে কোমায় আচ্ছন্ন। তিনি এর কারণ স্বরূপ নোট বাতিল চিহ্নিত করেছেন। তিনি একটি রিপোর্টে দেখিয়েছেন ২০১৯ সালে নোট বাতিলের প্রভাবে ভারতের রিয়েল-ষ্টেট অর্থাৎ নির্মাণ শিল্পে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতির মুখোমুখি হয়। বোঝাই যাচ্ছে এই ক্ষতি গরিবের ক্ষতি, শ্রমিকের ক্ষতি, কেননা যারা রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেন। যারা নির্মিত বাড়িগুলো ক্রয় করেন তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ পায়। কিন্তু যে শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের কোন ঋণের ব্যবস্থা নেই। আকস্মিক নোট বাতিলের ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। তারা কাজ পায়না, পেমেন্ট পায় না, অনেকেই তাদের পাওনা কড়িটুকুও পায়নি। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই সাধারন মানুষ, গরিব মানুষ, সুদুরপ্রসারি গরিব মারার পরিকল্পনা ছাড়া এমনটা হয়েছে ভাবতে কষ্ট হয়।
এনআরসি
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের আনীত নাগরিক সংশোধনী আইন দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সারাদেশ। এনআরসির ঘোষণা দেওয়ার কারণেই সাংঘাতিকভাবে মার খায় পর্যটন শিল্প। রিপোর্ট থেকে জানা যায় এনআরসির কারণে ভারতের পর্যটনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমে যায়। তাজমহলের মত আকর্ষনীয় জায়গাতেও মাত্র দুই-সপ্তাহের মধ্যে দুই লক্ষের অধিক বিদেশি পর্যটক তাদের সফর বাতিল বা স্থগিত ঘোষণা করে। বেশ কিছু দেশ তাদের নাগরিকদেরকে ভারত সফরের ব্যাপারে কড়া কড়ি করে। যার ফলে পর্যটন শিল্প থেকে ভারতের আয় কমে যায়। আসামে এক শিং বিশিষ্ট ডাইনোসর দেখতে যে সময়ের মধ্যে পাঁচ লাখ পর্যটক আসার কথা সেই সময়ে মাত্র ১০ শতাংশ পর্যটক আসে। পর্যটনশিল্পের এই ক্ষতি দেশের অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রেও সরকারের বিভেদমূলক নীতি ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক মনোভাবকে দায়ী করা যেতে পারে।
জিএসটি
সরকার দেশের কর ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনে। সারাদেশে এক কর চালু করার নামে চালু করা হয় গুড এন্ড সার্ভিস ট্যাক্স বা জিএসটি। এই জিএসটি চালু করার সময় যথেষ্ট পরিকল্পনা ও পরিকাঠামোর অভাব ছিল। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষ করে গরিব ছোট ব্যবসায়ীরা জিএসটির নিয়ম অনুসরণ করতে না পারার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে বস্ত্রশিল্প, নির্মাণশিল্প ইত্যাদি শিল্পে বিপর্যয় দেখা যায়। এই সকল শিল্পের সঙ্গে জড়িত গরীব সাধারন মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে। জিএসটির পরবর্তী ধাপে আসে রাজ্য গুলোর প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব। কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রতিশ্রুতি মত জিএসটির অংশ রাজ্যগুলিকে দিতে অস্বীকার করে। যার ফলে রাজ্য সরকারগুলি তাদের জনগণ থেকে অর্জিত কর থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। অর্থনৈতিক প্রবাহ ব্যাহত হলে তা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর ভারতে হয়েছেও তাই। এখানেও সরকারের সুপরিকল্পিত রাজনীতি কাজ করেছে। যা দেশের স্বার্থকে নয় বরং মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে সাহায্য করেছে।
বিদ্বেষ মূলক বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা
কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে সেই দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার উপর। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে একের পর এক অস্থিতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গো-রক্ষার নামে একশ্রেণীর উশৃংখল দেশজুড়ে মানুষদেরকে হত্যা করতে শুরু করে। দেশজুড়ে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি হয়। যার ফলে, গো-পালন, ব্যবসা, দুধ উৎপাদন, কৃষিকাজে গো-সম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি সাংঘাতিকভাবে মার খায়। সেখানে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দায় ঘাড়ে এসে পড়ে সাধারণ মানুষের উপর। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কসাইখানার মালিকরা হাজার হাজার গো-হত্যা করে তার মাংস বিদেশে রপ্তানি করলে তাতে গো-ভক্তরা কোন দোষ দেখতে পায়না। গরীব সাধারন মানুষ মাংস, দুধ বা চাষের জন্য গরু ক্রয় বিক্রয় করলেও তাতে দোষ খুঁজে পাওয়া যায়। গরু নিয়ে মানুষকে রাস্তায় বের হতে দেখলে যখন তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কে গোরু পালন করতে যাবে? এক্ষেত্রেও দেখা যায় সাংঘাতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ মানুষের অর্থনীতি।
এভাবে যদি আমরা একের পর এক বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাব ভারতের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূলে আছে সরকারের ভ্রান্ত নীতি। সাম্প্রদায়িক মনোভাব, বিচ্ছিন্নতাবাদ, দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাখা ইত্যাদির কারণে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে দেশের অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই ক্ষতির প্রভাব সরাসরি এসে পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের উপর। মেরুকরণের অর্থনীতিতে বিত্তশালীদের কে আরো বিত্তশালী করা এবং গরীবদেরকে আর গরীব করে দেওয়ার, আরো নিঃস্ব করে দেয়ার এই পরিকল্পনা।
( লেখক- বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও সমাজসেবী )