Wednesday, September 18, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

সাংবাদিকদের গ্রেফতারির ঘটনাকে “বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী” আখ্যা দিল জামাআত

সামাউল্লাহ মল্লিক, দৈনিক সমাচার, নয়াদিল্লি : মঙ্গলবার দিনভর সাংবাদিক, লেখক, কৌতুক অভিনেতাদের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পাশাপাশি কিছু সাংবাদিককে ইউপিএ-র অধীনে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বুধবার দিল্লির জামিয়া নগরে অবস্থিত সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জামাআতে ইসলামী হিন্দ।

এদিন জামাআতের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সেলিম ইঞ্জিনিয়ার বিহারে জাতিভিত্তিক আদমশুমারি এবং সংসদে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেন। আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক মোহতাসিম খান নারীদের বিরুদ্ধে মব লিঞ্চিং এবং যৌন সহিংসতা সম্পর্কে কথা বলেন। জামাআতের মহিলা বিভাগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি রেহমাতুন্নিসা নারী সংরক্ষণ বিল সম্পর্কে এবং মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি কে কে সোহেল সাংবাদিকদের বাড়িতে পুলিশি অভিযান সম্পর্কে সরব হন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হইহই করে পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। কেন্দ্রীয় সরকার দৃশ্যতই পুলকিত। এর মাধ্যমে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণ করা হবে। ‛নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়াম’ নামের এই আইনটি পরবর্তী আদমশুমারি এবং সীমানা নির্ধারণের অনুশীলন প্রকাশের পরে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, এই আইনের সুবিধাগুলি ২০২৯ সালের পরেই পাওয়া যাবে। এই আইনের বিষয়ে জামাআতের মন্তব্য, এই আইনে আরও অনেক যোগ্য অংশ উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। জামাআতের নেতৃত্বের কথায়, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য, ক্ষমতার বণ্টনে সকল যোগ্য শ্রেণী ও সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পেতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সংসদ ও রাজ্যসভায় নারীর প্রতিনিধিত্ব হতাশাজনক। তাই এই নতুন আইনটি একটি ভাল পদক্ষেপ। এই আইন আরও আগে আসা উচিত ছিল। তবে জামাআত জানায়, এসসি ও এসটি মহিলাদের এই আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিন্তু ওবিসি এবং মুসলিম মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এদিনের প্রেস কনফারেন্স থেকে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরিকে একহাত নেন জামাআত নেতারা। সংসদে সাংসদ দানিশ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা অবমাননাকর ভাষার তীব্র নিন্দা করেছে জামাআত। বিধুরির এই লজ্জাজনক আচরণ দেশের সভ্য নাগরিকদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং সংসদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে বলে মন্তব্য করে জামাআত। কোনও সম্মানিত নাগরিকের ওপর জাতিগত অপবাদ দেওয়া এবং তার ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্য করে তার ধর্মকে অবমাননা করা একটি অপরাধমূলক কাজ। জামাতের কথায়, “দুর্ভাগ্যবশত, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব রয়েছেন এবং সংসদে বিধুরির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটি একজন মাননীয় সংসদ সদস্যের অপমান। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে এবং তাদের ধর্মকে অবমাননা করার জন্য অনুরূপ শব্দ ব্যবহার করেছেন বিধুরি। প্রকৃতপক্ষে, এই সবই মুসলিম, দলিত এবং আদিবাসীদের মতো নাগরিকদের প্রতি শাসকদলের গৃহীত আগ্রাসী ও বর্ণবাদী চিন্তাধারার স্বাভাবিক পরিণতি, যা ক্রমশ ভিত্তি লাভ করছে। এই মনোভাব ক্ষমতাসীন দলের অনেক সদস্যের মধ্যে ব্যাপক ইসলামফোবিয়াকে প্রকাশ করে। জামাআতে ইসলামী হিন্দ বিশ্বাস করে যে সংসদ সদস্যরা নাগরিকদের জন্য রোল মডেল। তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া একটি বার্তা দেবে যে এই ধরনের আচরণ এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এটি অশুভ উপাদানকে উৎসাহিত করবে যা আমাদের মহৎ ঐতিহ্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মূল্যবোধকে আঘাত করবে। সেজন্য আমরা দাবি করছি ভাদুড়ির সদস্যপদ বাতিল করা হোক।”

সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের গ্রেফতারির ঘটনাকে “বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী” আখ্যা দিয়েছে জামাআত। তদন্তের নামে দিল্লি পুলিশ কর্তৃক স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, ব্যঙ্গাত্মক লেখক এবং ভাষ্যকার সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বাড়িতে ভোরবেলা অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছে জামাআত। সংগঠনের অভিযোগ, একথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে দিল্লি পুলিশ সেসব সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে যারা বিভিন্ন সরকারী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কে কে সোহেল বলেন, “গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের এই মনোভাব নতুন নয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ ও ভীতি প্রদর্শন বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী। এটা আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেবে।”

Leave a Reply

error: Content is protected !!