দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : সালটা ১৯৮১। কাঠফাটা রোদে রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন মহাশ্বেতা দেবী। হঠাই প্রশ্ন করলেন রিকশাওয়ালা, “দিদি, জিজীবিষা শব্দের মানে কী?”। জীবনের নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ লেখিকা চমকে উঠেছিলেন সেদিন। সেই আগন্তুকের জ্ঞানসুলভ কথা শুনে নিজের পত্রিকায় লিখতে বলেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। লেখক জীবনের সেই শুরু।
জীবনের পথ চলা অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল তার অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু পরিবার। শৈশব কেটেছে গরু চড়িয়ে, কখনও বা জন খেটে। এক পথের বাঁকেই বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন অসম। সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশ। জীবিকার সন্ধানে গেলেও মেলেনি কিছুই। ফিরে আসতে হয়েছিল রাজ্যে।
ডেরা তখন যাদবপুরে। মোট বয়ে খাবার জোগাড় করেন। স্টেশনে শুয়ে কাটে রাত। দেখা হয়েছিল কমিউনিস্ট বিপ্লবী আশু মজুমদারের সঙ্গে। শুরু হয়েছিল দিনবদলের স্বপ্ন দেখা। ছেলে বামপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জানতে পেরেই পুলিশের ভয়ে ছেলেকে নিয়ে বাবা মা চলে গিয়েছিলেন দণ্ডকারণ্য।
উদ্বাস্তুদের সেই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে আবার পালিয়ে চলে আসা কলকাতায়। তখন মাথায় ঘুরছে বিপ্লব। ধরা পড়ে গেলেন পুলিশের হাতে। জেলে কাটল দু’বছর। জেলে বসেই প্রথম লেখাপড়া শেখা। তারপর আঁকড়ে ধরা এই বইকেই। পরবর্তীতে আবার দণ্ডকারণ্যে ফিরে যাওয়া। শঙ্কর গুহনিয়োগীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে বদলে গিয়েছিল জীবনদর্শনটাই।
পেটের তাগিদে কখনও করতে হয়েছে সাফাইকর্মীর কাজ। কখনও দারোয়ান অথবা রান্নার লোকের হাড়ভাঙা পরিশ্রম। পাশাপাশি নিজের দলিত জীবনের নানা পর্ব, বাধা, অনুসঙ্গ বারবার ফুটে বেরিয়েছে তাঁর লেখনিতে। বৃত্তের শেষ পর্ব, জিজীবিষার গল্প, অন্য ভুবন, ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন এমন ২১ টি গ্রন্থের রচয়িতা মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবার হুগলি বলাগড় কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী।