Wednesday, February 5, 2025
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক ফিরতেই পারেননি ঘরে, জানাচ্ছে সমীক্ষা

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : ভিন রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের মাত্র ৩৩ শতাংশই ফিরতে পেরেছেন ঘরে। ৬৭ শতাংশের সেই সুযোগ হয়নি। আটকে থাকা শ্রমিকদের ৫৫ শতাংশ এখনই ঘরে ফিরতে চান। একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

ওই সমীক্ষাতেই জানানো হয়েছে, ঘরে ফেরা শ্রমিকদের ৮৫ শতাংশই নিজেদের টাকাতেই ফিরতে হয়েছে। সমীক্ষা আরও জানাচ্ছে, গাঁটের কড়ি খরচ করে ফেরা শ্রমিকদের ৬২ শতাংশই ১৫০০ টাকার বেশি ভাড়া দিয়েছেন ঘরে ফেরার জন্য।

দ্য স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ফোনে কথা বলে এই সমীক্ষা চালিয়েছে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ১৯৬৩ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথার ভিত্তিতে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার ‛টু লিভ অর নট টু লিভ : লকডাউন, মাইগ্ৰ্যান্ট ওয়ার্কার্স অ্যাণ্ড দেয়ার জার্নিস হোম’ শিরোনাম দিয়ে ওই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য ভাড়া নেওয়া যাবে না বলে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ দেয় অনেক পরে, মে মাসের ২৮ তারিখ ওই নির্দেশের পরে ঘরে ফেরার জন্য‌ আর বিশেষ কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না।

সমীক্ষায় পরিযায়ীরা জানিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ আসতে আসতে আমরা অধিকাংশ শ্রমিক ঘরে ফিরে আসি। যে শ্রমিকরা ঘরে ফেরার জন্য বেরিয়ে ছিলেন, তাঁদের ৪৪ শতাংশ বাস ধরেন। ৩৯ শতাংশই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের সুযোগ পেয়েছেন। ১১ শতাংশ ট্রাক-লরিতে ফিরেছেন। ৬ শতাংশ শ্রমিক পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরেছেন। সমীক্ষা দেখাচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকই এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। এই অবস্থায় লকডাউন কার্যত উঠে গেছে। অনেক জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। তারপরেও সমীক্ষা অনুযায়ী অর্ধেকের বেশি ৫৫ শতাংশ শ্রমিক অবিলম্বে ঘরে ফিরতে চাইছেন।

এখনও কেন এত বিপুল পরিমাণ শ্রমিক ঘরে ফিরতে চাইছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে সমীক্ষার অন্য একটি অংশে। ৫৯১১ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গেছে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পয়লা জুন পর্যন্ত বিপন্ন অবস্থায় ৮২১টি ফোন করেছেন সরকারি আধিকারিকদের কাছে। সমীক্ষা জানাচ্ছে, যারা এই ফোন করেছিলেন তাঁদের ৮০ শতাংশের কাছে লকডাউনের সময় কোনো সরকারি রেশন পৌঁছায়নি। ৬৩ শতাংশের কাছে একশো টাকারও কম পড়ে ছিল। ৬৭ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের কাছে কোনো রেশন, টাকা নেই। তারা অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন।

সমীক্ষা রিপোর্টে যখন এইরকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেই সময় রেলের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে বিপুল আর্থিক দায়ভার বহন করে শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে যাদব বলেন, ১ মে থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানো হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো হয়েছে। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনগুলিতে ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৬০০ টাকা করে। এরফলে আয় হয়েছে ৩৬০ কোটির মতো। এটা মোট খরচের ১৫ শতাংশ বলে দাবি রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের। তিনি সেই ট্রেন চালানোর ৮৫ শতাংশ খরচ কেন্দ্রের এবং ১৫ শতাংশ রাজ্যের তত্ত্বেই থেকেছেন।

রেলের আধিকারিকরা বলেছেন, এক-একটি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালাতে খরচ হয়েছে ৭৫ – ৮০ লক্ষ টাকা। সেই হিসাবে পরিচালনা খরচই নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বিহারের জন্য ভার্চুয়াল সমাবেশ থেকে এই দাবি করেছিলেন। শ্রমিকদের বক্তব্য, যে দূরত্বের জন্য স্লিপারে মোট টাকা ভাড়া নিয়েছে রেল, সেই টাকাই সাধারণ সময়ই দেওয়া হয়। তাহলে তখন কী লোকসানে চলে ট্রেন। আর স্বাভাবিক সময়ে যদি সরকার ভর্তুকির দিয়েই ট্রেন চালিয়ে থাকে, তাহলে এখন শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে আর্থিক দায়ভার নিয়েছে এইকথা বলার অর্থ কী? উল্লেখ্য, সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা নিয়ে মোদী সরকারের সলিসিটার জেনারেলে তুষার মেহতা জানিয়েছেন, ট্রেনের ভাড়া যে রাজ্য থেকে ট্রেন ছেড়েছে এবং যেখানে পৌঁছেছে সেই সরকার দিয়েছে। কেন্দ্র সরকার ভাড়া দেয়নি। একইভাবে ট্রেনে ওঠার সময়ে যে খাবার-জল দেওয়া হয়েছে সেটা যেখান থেকে ট্রেন ছেড়েছে সেই রাজ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তুষার মেহতা। ১২ ঘন্টার বেশি যে ট্রেন চলেছে সেখানে খাবার-জল দিয়েছে রেল, জানান সলিসিটার জেনারেলে।

ট্রেন সফর করা পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিযোগ, এই খাবার জলের অভাব নিয়েই। শ্রমিকদের বক্তব্য ট্রেনে আমরা কোনো রকম খাবার জল ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা সফর করেছি। কেন্দ্র সরকার তো কিছুই করেনি, তাহলে পরিযায়ীদের নিয়ে এত কিছু করার দাবি করছে কেন সরকার, প্রশ্ন করছেন ঘরে ফেরা শ্রমিকরা।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!