দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : করোনা আগ্ৰাসী আক্রমনের মুখে পড়ে দেশে যেভাবে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমনের হার তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে আর মাত্র দু’মাসের মাথায় পৃথিবীর সকল দেশকে পিছনে ফেলে দেবে ভারত। বর্তমানে ভারত চার নম্বরে অবস্থান করছে। সামনে আছে আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া। এখবর লেখা পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে ১০ হাজার জনের মতো। রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লাগছে ১৫ দিনের কাছাকাছি। অর্থাৎ পাঁচ লক্ষ সংক্রমণ নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলকে ছুঁতে ১৭ থেকে ২০ জুন সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর কুড়ি লাখের বেশি সংক্রমিত হওয়া এবং প্রায় দু লাখের মৃত্যু ছুঁতে চলা আমেরিকাকে টপকে যেতে দু’মাসের কাছাকাছি বা তার সামান্য একটু বেশি সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। এর ফলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্বের করোনা তালিকায় এক নম্বর স্থানে ভারতের যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্র ও দিল্লির। পিছিয়ে নেই তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গও। মহারাষ্ট্র বিশেষ করে মুম্বাই ও দিল্লিতে ভয়ঙ্কর অবস্থা বলেছে খোদ সুপ্রিমকোর্ট। সেখানে চারিদিকে অব্যবস্থা। চিকিৎসাহীনতা আর মৃত্যু নিয়ে হাহাকার চলছে। আর বিপদ-ঘন্টা বাজার অপেক্ষায় আছে দেশের বাকি রাজ্য।
১ মে থেকে শ্রমিক স্পেশাল আর ১৮ মে থেকে লকডাউন শিথিল করেছে মোদী সরকার। এই জোড়া ফলাই করোনা আক্রমণ চালাচ্ছে দেশ জুড়ে। মার্চে প্রথম যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল তখন সংক্রমন অনেক কম ছিল। হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সুযোগ কেড়ে নেন। যখন ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিলেন তখন প্রবল সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ট্রেনে ফেরা ওইসব মানুষরাই এখন নানাভাবে সংক্রমনের শিকার হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। একজনের সংক্রমনের সেই রাজ্যে আরও দশজন বিশজন সংক্রমিত হচ্ছে। দেশজুড়ে রোজগারহীন মানুষদের খাওয়াপরার অনিশ্চিয়তার সঙ্গে কাহিল হচ্ছেন সংক্রমণে। এইসব মানুষদের হাহাকার দূর করার জন্য চিকিৎসা, রোজগারের ব্যবস্থা না করে মোদী, অমিত শাহরা মেতে উঠেছেন রাজনৈতিক খেলায়। ক্ষমতালাভের মত্ততায় নাগরিকদের দিকে সহানুভূতিশীল হওয়ার ইচ্ছাটাকে মেরে ফেলেছেন বোঝা গেল ডিজিটাল মাধ্যমে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালে হতে চলা নির্বাচনের দামামা বাজানো দেখে। বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সাগরেদ অমিত শাহ বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে যখন ভোটযুদ্ধের হুঙ্কার ছাড়ছেন তখন রাজ্যে রাজ্যে মানুষের আর্তনাদ বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে আর সীমান্তে চিন শাসাচ্ছে ভারতীয় সেনাকেও।
এমন কঠিন সময়েও সব লজ্জার মাথা খেয়ে ‛প্রচার ঝড়’ চালাতে মাঠে নেমে পড়েছেন। শুধু এই দুই রাজ্যেই নয়, রাজ্যসভা নির্বাচন হতে চলা একাধিক রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচা করে ক্ষমতা দখল করার চক্রান্তের অভিযোগ উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর ক্ষমতালোভী বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে কংগ্রেস বিধায়কদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে অসহায়ভাবে। দেশের নাগরিকদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে ভয়ঙ্কর খেলা খেলতে চাইছে বিজেপি শিবির। মহামারির মুখে পড়া দেশের নাগরিকদের নিয়ে মোদী-শাহদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই, তা তাঁদের রাজনৈতিক আবরণ থেকেই স্পষ্ট। ঠিক বড়ো ভাই ট্রাম্পের মডেলেই দেশ চালাচ্ছেন মোদী-শাহ জুটি। আমেরিকার মানুষের প্রাণহানীতে অবিচল ট্রাম্প যেমন নিজের আসন্ন ভোট নিয়েই মেতে আছেন সেভাবেই ভ্রূক্ষেপহীন মোদী-শাহ। ক্ষমতার মোহে স্থান-কাল-পাত্রের অবস্থানও ভুলে গেছেন। দেশের নাগরিকদের একাংশও মোহাবিষ্ট হয়ে আছেন বিজেপির প্রতি। সেই মোহগ্ৰস্থ মূল্যই এবার দিতে হবে তাদের , আগামী দু’-তিন মাসের মধ্যে।