Wednesday, February 5, 2025
সম্পাদক সমীপেষু

মোদীজি – দেশতো এমনিতেই অন্ধকারে আছে, ৯ মিনিট বাতি নিভিয়ে কি বার্তা দিলেন?

ছবি : সংগৃহিত
জুবায়ের আহসান

করোনা আতঙ্কে স্তব্ধ জন জীবনেও আমাদের উৎসবের অভাব নেই। আমরা আমুদে মানুষ, শ্মশান থেকে গোরস্থান, মসজিদ থেকে মন্দির সর্বত্রই আমোদ আহ্লাদের ছড়াছড়ি। পেটে বিদ্যে, মাথায় বুদ্ধি, ঘরে চাল ডাল, ক্ষুধাতুর শিশুর এক মুঠো ভাত, মাথার ওপর একটু ছাওনি, ওসব নাই থাক, একটু রসের দৌলতেই জীবন ধন্য বোধ করি। এমনিতেই দেশী পাবলিককে ধরে আনতে বললে বেঁধে আনে। এই তো কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে ‛তালি থালি উৎসব’ পালন করতে বললেন, আর ভক্তরা কি করেছিল সেটা ইতিহাস। অর্থাৎ, ভক্ত সর্বদাই ভগবানের এক কাঠি বাড়া।

এখন আবার নতুন আমদানি, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে রবিবার রাত্রি ৯টায় সমস্ত বৈদ্যুতিন বাতি নিভিয়ে ৯ মিনিটের মোমবাতি জ্বালো উৎসব সারাদেশে ধুমধাম করে পালিত হল। উপলক্ষ করোনা প্রতিরোধে একসাথে লড়াই করা ও খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার। অবশ্য এগুলোর দরকার আছে। নইলে রাইফেল হাতে, টুপি দাড়ির করোনা দিন দিন সন্ত্রাসী রূপ ধারণ করছে। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পাশে সত্যিই কি সরকারকে এখনও পর্যন্ত কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে? দেড় লক্ষ কোটি টাকার বাজেটের কতটা অংশ এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে সেটা অজানা। জানতে হলে অবশ্যই আরটিআই ফাইল করতে হবে, এছাড়া উপায় নেই।

পূর্বে যেমন তালি থালি উৎসবে অলিতে গলিতে একটা উন্মাদ উল্লাস দেখা গিয়েছিল, এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা। আমুদে পাবলিক মোমবাতি জ্বালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সকল প্রকার আতসবাজি করা হয়েছে। শত শত মোমবাতি মিছিল হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই লক ডাউন বলবৎ করতে পুলিশকে নির্মম ভাবে প্রহার করতে দেখা গিয়েছিল। ব্যাগ হাতে বাজার করে ফেরা আম জনতা, শিশুর দুধ কিনে ফিরতি একজন বাবা পুলিশের নৃশংসতায় প্রাণ হারিয়েছিল। এখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে এই যে কোটি কোটি মোমবাতি আর বাজি নিশ্চয় ভক্তদের বাড়িতে আগে থেকে কেনা ছিলনা, বাজারে বেরোতে হয়েছিল, পুলিশ তাদের ওপর কি লাঠি চার্জ করেছে? নাকি ৫ ই এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সাত খুন মাফ করা হলো।

মাইরি জনগন এসব গিলছেও বটে! কেবল গণ্ড মূর্খরাই নয়, শিক্ষিত ধেড়ে জ্ঞানপাপী খচ্চরও আছে এই দলে। ভাবতে অবাক লাগে এই জ্ঞানপাপীরা কিভাবে এই রাষ্ট্রীয় অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনাকে সমর্থন করছে! বড়ো বড়ো সেলেবদেরও দল বেঁধে ঘণ্টা বাজাতে দেখেছে সারাদেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা। আর ভক্তদের কথা তো ছেড়েই দিলাম। এমনিতেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসা কুসংস্কার গুলির বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে সবাই ভীষণ ক্লান্ত, উপরি সরকারি উদ্যোগে কুসংস্কার ছড়ানোর প্রচেষ্টা দেশের জন্য কোন্ কল্যাণ বয়ে আনবে?

যেখানে দেশের সিংহভাগ মানুষ দিন আনে দিন খায়। অবশ্য দিন আনে দিন খায় বলতে ঠিক কি বোঝায় বাবু সমাজের কাছে সেটা হয়ত ক্লিয়ার নয়। লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়ে অনাহারে ইতিমধ্যেই ৩০ জন মানুষ মারা গেছেন। সরকারি সাহায্য ব্যতীত আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যাটা ভয়ংকর রকমের বৃদ্ধি পাবে। অবশ্য বাবুদের তাতে কি যায় আসে! বাবুরা তো দাতা কর্নের দানের গাথা রচনা করতেই ব্যাস্ত। বাবুদের দান করতে বললে রে রে করে উঠছেন। যেখানে, সকাল সন্ধ্যা যাদের গালি না দিলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয়না সেই পাকিস্তান, বাংলাদেশের থেকেও বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আমাদের অবস্থান নিম্নে। সেখানে, মোমবাতি জ্বালিয়ে কি ক্ষুধা দূর করা যাবে?

পরিবেশবিদদের মতে যান চলাচল ও কল কারখানা বন্ধ থাকার ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছিল, পৃথিবীটা আবার সবুজ হতে শুরু করেছিল, পাখির কলকাকলিতে পল্লী মুখরিত হতে শুরু করেছিল। মোমবাতি আর আতশবাজি সেই সবুজের সম্ভাবনায় একটা বড় আঘাত করে গেল। পাশাপাশি আরও একবার দেশের খেটে খাওয়া মানুষের চলমান সমস্যাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাষ্ট্রের নিস্পৃহতা স্বগর্বে জানান দিয়ে গেল। দেশ তো এমনিতেই অন্ধকারে ছিল, নতুন করে ৯ মিনিট বাতি নিভিয়ে অন্ধকারটা আরো নিবিড় হল মাত্র।

Leave a Reply

error: Content is protected !!