নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, কলকাতা : অনাড়ম্বরপূর্ণ ঈদ উদযাপন, বাজার ও কেনা কাটা থেকে বিরত থাকা ও লকডাউন মেনে চলার বিষয়ে মুসলিম সমাজের দায়িত্বশীল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তরফ থেকে বিশেষ আবেদন করা হয়েছে।
বিশ্বব্যপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমন মানব সভ্যতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষা হিসাবে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান পরিসংখ্যান এবং আগামী দিনগুলিতে তার দ্রুত বিস্তারলাভের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
কিছু দিন পূর্বে পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে রাজ্যের দ্বীনি সংগঠন সমূহের দায়িত্বশীল বর্গ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিশেষ আবেদন করা হয়েছিল। মুসলমানেরা রাজ্য ব্যাপী তা মেনে চলছেন। মন না চাইলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবিহ-এর নামাজ ও জুমআর নামাজ মসজিদে আদায় করাকে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। লোকেরা বাড়িতেই নামাজ আদায় করছেন।
তৃতীয় পর্যায়ে লকডাউন আবার বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো কোনো জায়গায় এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়কে বিবেচনায় রেখে মুসলিম মিল্লাতের নেতৃস্থানীয়দের তরফ থেকে পুনরায় নিম্নোক্ত আবেদন জারি করা হচ্ছে। মিল্লাতে ইসলামীয়া এই আবেদনে ইতিবাচক সাড়া প্রদান করবেন ইনশাআল্লাহ, এই আশা ব্যক্ত করছেন মিল্লাতে দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ।
আবেদনটি নিম্নে দেওয়া হল –
◆ মুসলমানরা আলহামদুলিল্লাহ লকডাউন মেনে চলছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য তারাবিহ ও ফরজ নামাজের জামাআতে খুবই কম সংখ্যক লোকের উপস্থিতির বিষয়টি মেনে চলা হচ্ছে। এখন মসজিদে আজান দেওয়া হচ্ছে এবং গুটিকয়েক লোক নামাজ পড়ছেন। বাকি সব লোকেরা যে যার বাড়িতে নামাজ পড়ছেন। এই ধারা বজায় রাখতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত থাকতে হবে।
◆ সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউনে ঢিল দেওয়া হবে এমন কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এই সময়ে মুসলমানরা যেন বিশেষ কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই হাট বাজারে না যান। আমরা মসজিদের দিকে না গিয়ে মনে কষ্ট শিকার করে বাড়িতেই নামাজ আদায় করছি, তাহলে কেন রমজান বা ঈদের কেনাকাটার জন্য বাজারে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারব না? রমজান ও ঈদের কেনাকাটার ভিড় সাম্প্রদায়িক শক্তি ও বিদ্বেষী মিডিয়াকে আবার কোনও সুযোগ না এনে দেয় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ও পরিবেশকে খারাপ করার। এটা মনে রাখতে হবে তারা এর জন্য ওতঁ পেতে রয়েছে।
◆ ঈদুল ফিতর আড়ম্বরহীন ভাবে উদযাপন করতে হবে
◆ অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও ফজুল খরচ থেকে বাঁচতে হবে। কিছু অর্থ ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখুন।
◆ রমজান মোবারকের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অন্নেষন করতে হবে। নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইবাদতের ব্যবস্থাপনা করুন। বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করুন।
◆ প্রত্যেক মসজিদে মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তি রমজানের শেষ দশকে অবশ্যই ইতেকাফ করেন তার ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
◆ মাহে রমজান এবং ঈদের সময়ে আত্মীয়-স্বজন, পড়শী ও দুঃস্থ অভাবী মানুষদের প্রতি ও বিশেষ ভাবে সেই সব মিসকিনদের দিকে বিশেষ করে দৃষ্টি দিতে হবে যারা আত্মসম্মানের কারণে কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে পারে না ।
◆ রাজ্যের সকল নাগরিককে এই সময়ে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পক্ষ থেকে যে পরামর্শ ও নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে তা কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত প্রত্যেককেই। লকডাউন সম্পর্কে প্রশাসন যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা পুরোপুরি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে ও প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
শেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের সকলের আকুতি, হে আল্লাহ এই ভয়ঙ্কর মহামারী থেকে যথাশীঘ্র আমাদেরকে মুক্তি দিন এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ফিরিয়ে দিন। আমীন।
আবেদনকারীদের নাম
● ক্বারী ফজলুর রহমান, ইমামে ঈদাঈন, কলকাতা।
● মাওলানা আব্দুর রফিক, আমীরে হালকা, জামাআতে ইসলামি হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ।
● পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, ফুরফুরা দরবার শরীফ, হুগলি।
● আহমাদ হাসান ইমরান, সম্পাদক, পূবের কলম।
● ক্বারী শফিক কাশেমী,
ইমাম, নাখোদা মসজিদ, কলকাতা।
● ক্বারী মাওলানা শামসুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ।
● মাওলানা মারুফ সালাফী, জমিয়তে আহলে হাদীস।
● মাওলানা আবু তালীব রাহমানী, সদস্য, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।
● মাওলানা আলমগীর সর্দার, সাধারণ সম্পাদক, জমিয়তে আহলে হাদীস, পশ্চিমবঙ্গ।
● মুফতি আব্দুল মাতিন, সাধারণ সম্পাদক, সুন্নাত – অল – জামাআত।
● সাইয়েদ রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক, আইমা।
● মাওলানা মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন।
● মাওলানা শারাফাত আবরার, মজলিশে আহরার – এ- ইসলাম।
● শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক, আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, কলকাতা।
● মুফতি মাওলানা তাহেরুল হক, দারুল কাযা, (প: ব:)
● ডা: রইসুদ্দিন, সদস্য, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।
● সাউদ আলম, সাধারন সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিল, পশ্চিমবঙ্গ।
● মূফতী আব্দুল ক্বাইউম
মাগরিবী বাঙ্গাল আঞ্জুমানে অয়েজিন।
● মাওলানা হাসান মাহদী, শিয়া আলিম, কলকাতা।
● মাওঃ গোলাম মোস্তাফা
বোর্ড অফ ইসলামিক এডুকেশন।
● মাওলানা তামিম সিদ্দিকী, সিতাপুর দরবার শরীফ।
● মাওলানা নিয়ামত হুসাইন হাবিবি, সভাপতি, মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গ।
● আব্দুস সামাদ, রাজ্য কনভেনর, এপিসিআর।
● আব্দুল আজিজ, সাধারন সম্পাদক, মুসলিম মজলিশে মুশাওয়ারাত, পশ্চিমবঙ্গ।
● মাওলানা মাজাহারুল ইসলাম, সভাপতি, মাজলিসুল উলামা ওয়া আইম্মা।
● ওসমান গনি, রাজ্য সভাপতি, এস.আই.ও পশ্চিমবঙ্গ।
● সাইয়েদ সাজ্জাদ হোসেন, মুখপত্র ও যুগ্ম সম্পাদক মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষাকর্মী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ।
● মাহবুবুল হক, রাজ্য সভাপতি, আইটা।
মুফতি হামিদ কাসমী, ইমাম ও খতিব, সোলো আনা মসজিদ, ইকবালপুর, কলকাতা।
Support Free & Independent Journalism