নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ২৬ অক্টোবর: আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে রাজ্যে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এসআইও পশ্চিমবঙ্গ শাখা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতম জানিয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সাবির আহমেদ বলেছেন, “শিক্ষাঙ্গন খোলার জন্য আমরা দীর্ঘ আন্দোলন চালিয়েছি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।” তবে সংগঠনটি স্কুলছুট নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনা প্রকাশের দাবি করেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় স্কুলছুট একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবির আহমেদ বলেন, “স্কুলছুট নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের বিশেষ স্কীম তৈরি করতে হবে। দুয়ারে শিক্ষক পাঠিয়ে সমস্ত পড়ুয়াকে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি প্রেস কনফারেন্সে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল পড়ুয়াকে অবিলম্বে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানান সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি মোহাম্মাদ সালমান আহমাদ। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ১০০ কোটি টিকার কথা বলছেন, অথচ অধিকাংশ পড়ুয়া ভ্যাকসিন পায়নি।”
রাজ্য সভাপতি সাবির আহমেদ স্কুল-কলেজ চালানোর জন্য একগুচ্ছ নিয়ম ও বিধি ঘোষণা করেন।
সংগঠনের দাবি – স্কুলছুট সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায়। এই বৃদ্ধির হার রোধ করতে সরকারের উচিত আকর্ষণীয় এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্কুলছুটদের পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছাতে হবে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত পড়ুয়াকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও পুরো পদ্ধতি সরলীকরণ করতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পের আয়োজন করা যেতে পারে। পড়ুয়াদের শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না করে, সিলেবাস পুনর্মূল্যায়ন এবং সংক্ষিপ্ত করে দিয়ে পরীক্ষা নিতে হবে।
শিক্ষাঙ্গন চালানোর পরামর্শ হিসেবে এসআইও বলেছে – বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে ন্যূনতম শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত হতে হবে। বিদ্যালয়ের নতুন করে খোলার প্রথম সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা সকাল ৯ টা বা সকাল ১০ টা থেকে শুরু করে সর্বাধিক তিন ঘন্টা ক্লাসে অংশ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে, অন্য একটি ব্যাচ দুপুর ১টা থেকে অথবা ২টা থেকে শুরু করে তিন ঘন্টার জন্য উপস্থিত থাকতে পারে (ক্লাসের সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত হবে)। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ সেখানে একসাথে ৫০% শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে পারে। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০র অধিক সেখানে ২৫% শিক্ষার্থী একসাথে ক্লাসে যোগ দিতে পারে। শ্রেণিকক্ষে প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। শিক্ষার্থীদের একে অপরের থেকে দুই মিটার দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য স্কুল কর্মী যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে বা কোভিড-১৯ আক্রান্তের সম্ভবনা রয়েছে অথবা কোয়ারান্টাইনে রয়েছে তাদের স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বারা নির্ধারিত দিনের সংখ্যা অতিক্রম করেই কেবল স্কুলে আসতে পারবে। যে সমস্ত পড়ুয়াদের পরিবার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে তাদের বিদ্যালয় আসা থেকে বিরত রাখতে হবে। স্কুল প্রাঙ্গণ, আসবাব, স্টেশনারি, স্টাফ রুম, জলের ট্যাঙ্ক, রান্নাঘর, ক্যান্টিন, পরীক্ষাগার, গ্রন্থাগার, এবং শৌচাগারকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
সংগঠনটির আরও প্রস্তাব – রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যেহেতু জলবাহিত রোগের সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে তাই বিদ্যালয়ের জলের উৎস যেমন ট্যাঙ্ক এবং নলকূপ কে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল থার্মোমিটার, মাক্স, স্যানিটাইজার এবং সাবানের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ রাখতে হবে। বিদ্যালযয়ের স্টাফ রুমেও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যে জায়গাগুলিতে পানীয় জল পাওয়া যায়, হাত ধোয়া হয় সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গোল মার্ক কাটতে হবে যাতে করে কোভিড-১৯ এর নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করা যায়। কোন পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী অসুস্থ হলে রাপিড টেস্ট (RTPC) করতে।