Thursday, November 21, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

মুখেই ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, মোদীর সভার পর ব্রিগেডে বেড়েছে দূষণ, পরিষ্কারে হেলদোল নেই বিজেপির

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’এর প্রচার করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। দেশজুড়ে ক্যাম্পেনও চালিয়েছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সভা থেকেই ব্রিগেডে দূষণ ছড়ালো বিজেপি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মোদী এবং বিজেপির ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’কি তবে শুধু মুখেই। তাদের সভা থেকেই ছড়ানো হচ্ছে দূষণ। সোমবার সকালের দিকে তো ব্রিগেডের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে উলটো দিকটাও পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল না। মুখে বাঁধতে হচ্ছিল রুমাল। বেলা বাড়তে তবু কিছুটা কাটে তা।

উপর মহলের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল রবিবার ব্রিগেডে আগতদের বিরিয়ানি দেওয়া চলবে না । কিন্তু মাংস – ভাত যে দেদার খেয়েছেন বিজেপি কর্মীরা তার নমুনা সভার ৩৬ ঘণ্টা পরেও ছড়িয়ে আছে ব্রিগেড জুড়ে। রবিবার বিকালে সভা শেষ হলেও সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত গোটা মাঠ আবর্জনায় ভরে রয়েছে । মাটিতে সহজে না মেশা থার্মোকলের থালাতে খাওয়া চলেছে ব্রিগেডে। এখন ব্রিগেডের সবদিকেই তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সেইসঙ্গে খাবারের প্যাকেট থেকে নানা ধরনের জঞ্জাল বিশাল ব্রিগেড মাঠ ছেয়ে ফেলেছে। অথচ রাজনৈতিক সমাবেশের পর তা পরিষ্কার করে দেওয়াটাই রীতি। সেনাবাহিনী সেই শর্তেই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

গত সপ্তাহে গিয়েছে বামেদের ব্রিগেড। সেনাবাহিনীর সেই রীতি মেনে ব্রিগেডে সভা শেষ হতে না হতেই বাম কর্মীরা নেমে পরেন মাঠ পরিষ্কার করতে । ২৮ তারিখের ব্রিগেড শেষ হওয়ার পর থেকেই মাঠ সাফাইয়ের কাজে নেমেছিলেন অগণিত বামকর্মী। দুই দিনের অক্লান্ত , নিরলস পরিশ্রমের পর দু’দিনের মধ্যেই ঝকঝকে করে দেওয়া হয়েছে ময়দানের ওই সুবিশাল মাঠ । শুধু মাঠে পড়ে থাকা কাগজ – প্যাকেট নয় , বাতাসে ভর করে মাঠে এসে পড়া শহুরে জঞ্জালও সাফ করে দিয়েছেন সিপিআই ( এম ) কলকাতা জেলার তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা । রাজনৈতিক সমাবেশ হয়ে যাওয়ার পর ব্রিগেডকে কতটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হলো , সেদিকে নজর রাখেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা ।

কিন্তু এবারে বিজেপির সভায় খোদ প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকায় সেনার তরফেও কোনও বাক্যব্যয় করতে দেখা যাচ্ছে না । যেহেতু ময়দান চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর , তাই সেখানে কোনও ধরনের সমস্যা হলে তাঁদেরই হস্তক্ষেপ করার কথা । রবিবার বিজেপির ব্রিগেডে সভার পরে কাউকে দেখা যায়নি পরিষ্কার করতে। পরিষ্কার করা নিয়ে কোনো হেলদোল নেই বিজেপির। ব্রিগেড জুড়ে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে , তা পরিষ্কার কে করবে সেটাই এখন প্রশ্ন ।

পায়ের তলায় পিষ্ট ঘাস। সবাই মৃত। আর ঘাস মরে যাওয়াতেই ধুলো উড়ছে ব্রিগেডে। সহনসীমার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ সূক্ষ্ম ও অতি সূক্ষ্ম কণা বাতাসে ভাসছে। সূক্ষ্ম ধূলিকণা বা পিএম ১০ শ্বাসযন্ত্রে ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা বা পিএম ২.৫ সরাসরি ঢুকছে ফুসফুসে। তাতে নানা ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকছে মানবদেহে। আর পায়ে পায়ে আক্রান্ত পরিবেশও। ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ। পরিবেশবিদরা যা দেখে শঙ্কিত।

পরিবেশবিদদের কথায়, সারা রাজ্যের মানুষের পায়ে পায়ে এই শহরে এসে জমা হয়েছে ধুলো। যা রবিবার দিনভর উড়েছে। ছিল সোমবারও। ঘাসের ধুলো টেনে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু পায়ের চাপে সেগুলোর আস্তরণটাই মাটি থেকে উঠে যায়। এমনিতেই এই সময় শুষ্ক আবহাওয়া। তার উপর ময়দানে ঘাসের আস্তরণটা উঠে গেলে ধুলো উড়তে থাকে। সেটাই হয়েছে এবার। একটা ব্রিগেডের পর অন্তত মাসখানেকের যদি ব্যবধান থাকে, তাহলেও মরে যাওয়া ঘাসের জায়গায় নতুন ঘাস জন্মায়। কিন্তু ভোটের সময় তা হয় না। তাছাড়া শুধু ব্রিগেড নয়। শহরের একাধিক জায়গাতেই রাজনৈতিক দলের নিত্য-নৈমিত্যিক মিছিল-মিটিং লেগে থাকে। আর তা থেকে পায়ে পায়ে উড়তে থাকে ধুলো।

রবিবার ফোর্ট উইলিয়ামের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে যে দূষণের মাত্রা ছিল তা বেশ খারাপ। নিয়ম অনুযায়ী ১০১-২০০ পর্যন্ত দূষণের মাত্রা যদি থাকে তবে তা খারাপের দিকেই। রবিবার দিনভর সেই মাত্রা ওঠা-নামা করেছে ১৯২ থেকে ২০০-র মধ্যে। তবে সোমবার সেই পরিমাণটা কিছুটা কমেছে। যে দূষণটা অবশ্য ছড়িয়েছে তার বেশিরভাগটাই এই ধূলো থেকে। সোমবারও এর মাত্রাটা ছিল অনেকটাই। ১২৪ থেকে ১৩০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে।

পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, যেভাবে মিটিং-মিছিল চলছে তাতে আগামী দু’মাস দূষণের মাত্রাটা বাড়বে শহরে। সেক্ষেত্রে শুধু করোনা থেকে বাঁচতে নয়, ধুলোর হাত থেকে বাঁচতেও মাস্ক বড় ভরসা হতে পারে। তাঁদের কথায়, ভোট তো হবেই। জনসভাও হবে। কিন্তু দলগুলোর এই ব্রিগেড ভরানোর ব্যবধান যদি একটু বেশি হয়, তবে ধুলোর থেকে একটু বাঁচে শহর। শহরে এত মানুষ এলে তাঁদের পায়ে পায়ে ধুলো তো আসবেই। আর তার জের থাকে আরও বেশ কয়েকদিন। এতটাই ধুলো ওড়ে এই সময় যে মাঠে আসা মানুষ এমনকী যাঁরা সেখানে ছোট-খাটো জিনিস, খাবার বিক্রি করেন, তাঁরাও মুখে রুমাল বাঁধেন।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “যে কোনও ব্রিগেডের জনসভাতেই সবুজ ধ্বংস হয় ময়দানে। ঘাস পায়ে পিষ্ট হয়। ফলে ধুলো টেনে নিতে পারে না। ধুলো উড়তে থাকে মারাত্মকভাবে।

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!