দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : ভারতের সুপ্রাচীন সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বিলুপ্ত করে দেওয়ার পরে হাঁটছে মোদী সরকার। এই শূণ্যস্থান পূরণ করতে চলেছে প্রসার ভারতী। ভারতের স্বাধীনতার সময়কাল থেকে এই অলাভজনক সংস্থা (পিটিআই) তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সুনামের সঙ্গে। দেশের প্রথম সারির স্বতন্ত্র (বেসরকারি) সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলি পিটিআইয়ের সদস্য। দৃঢ়তার সঙ্গে খবরের ভারসাম্য ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে তারা। দেশের এমন প্রত্যন্ত এলাকায় এই সংস্থার প্রতিনিধিরা গিয়ে সংবাদ সংগ্ৰহ করে আনেন যেখানে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা পৌঁছতে পারেন না।
অন্যদিকে, প্রসার ভারতী গণপরিসরের সম্প্রচারকারী হিসাবে আজও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। ১৯৯৭ সালে পার্লামেন্টে বিশেষ আইনের মাধ্যমে যে দায়িত্ব এই সংস্থাকে অর্পণ করা হয়েছিল, তা যথাযথভাবে পালিত হয়নি। স্বায়ত্তশাসিত হওয়া সত্ত্বেও প্রসার ভারতী কেন্দ্র সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে উঠেছে। এআইআর ও দূরদর্শন নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রই। তাহলে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কেন?
সম্প্রতি চিনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল পিটিআই। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই এবং মিডিয়াতে অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ করেছিল তারা। ইন্দো-চিন অস্থিরতার সময় এই আলাপচারিতা থেকে উঠে এসেছিল এমন সব তথ্য যা দুই দেশের জন্য সংবেদনশীল। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রসার ভারতী অভিযোগ তোলে যে পিটিআইয়ের কার্যকলাপ ‛দেশের স্বার্থের জন্য হানিকারক’। কিন্তু এই দোষারোপ অসংগত। ‛জাতীয় স্বার্থ’-এর সংজ্ঞা কী তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমলারাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং সংবাদের ন্যয্যতা সম্পর্কে নিদান দিতে শুরু করেছেন। প্রসার ভারতী নিউজ সার্ভিস (পিবিএনএস) নামে এক সংস্থার মাধ্যমে পিটিআইকে চিঠি পাঠিয়েছে প্রসার ভারতী যার কথা কেউ জানেনা।
সরকারের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে এবং তার রাজনৈতিক সহযোগীদের সুবিধা করে দিতে প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য এই প্রাথমিক পদক্ষেপ। কয়েক বছর ধরে কেন্দ্র সরকার নিজেদের মতাদর্শে বিশ্বাসীদের পিটিআইয়ের মাথায় বসিয়ে এই সংস্থাকে অধিগ্ৰহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু পিটিআই বোর্ড এই অশুভ চক্রান্তকে বানচাল করে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগ কার্যত আগের ছককে বাস্তবায়ন করার দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
যদি পিটিআইয়ের এমন দশা হয়, তাহলে বেসরকারি সংবাদ সংস্থাগুলির জন্য কী দুর্দিন অপেক্ষা করছে তা সহজেই অনুমেয়। গণস্বার্থের বদলে সরকারের স্বার্থেই তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে এবং হবে। সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে হতে হবে দমনপীড়নের শিকার। প্রসার ভারতীকে সামনে আনার জন্য পিটিআইয়ের নেওয়া চিনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি অজুহাত মাত্র। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি যে সংবাদ সংস্থা গুলি রয়েছে যারা পিটিআইয়ের থেকে খবর সংগ্রহ করে ‛জাতীয়তাবাদ’-এর নামে তাদের উপর আসলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে কেন্দ্র সরকার।
এই ঘটনায় প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া স্তম্ভিত। পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার এই কার্যক্রমে তারা উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের ‛চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসাবে পরিচিত প্রেসের স্বাধীনতা আগামীতে অক্ষুণ্ন থাকবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তিত প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া।