নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, কলকাতা: সারা দেশজুড়ে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ পরিণতির মধ্যেই লাক্ষাদ্বীপ ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি রেগুলেশন-২০২১ এর প্রস্তাবিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে যা দেশের অতি বৈচিত্রপূর্ণ দ্বীপমালা, লাক্ষাদ্বীপের অধিবাসীদের ক্ষমতা খর্ব করার এক নির্লজ্জ্ব প্রয়াস, এমনটাই বলল ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস্ ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া। তাদের দাবি, এই খসড়ায় প্রশাসন অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া সরকার এবং তার সমস্ত প্রশাসনিক শাখাকে লাক্ষাদ্বীপবাসীর জমির মালিকানা গ্রহণ এবং তার ব্যবহারে সরাসরি ও অবাধ হস্তক্ষেপের ক্ষমতা প্রদান করে দ্বীপের আদি বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকারকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
খসড়ায় ২৯ ধারায় সরকারকে ‘উন্নয়নের’ জন্য যে কোন জমি অধিগ্রহনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা জমি সরকার জমির মালিকের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারবে। প্রস্তাবিত খসড়ায় জ্ঞাতসারে অস্পষ্ট শব্দাবলী “জনগণের ব্যবহার” পরিভাষা উল্লেখ করে সহজেই প্রশাসনের দ্বারা এই আইনের অপব্যবহারের পথ খুলে রাখা হয়েছে। যদি এই আইন কার্যকরী হয় তবে তা লাক্ষাদ্বীপের অতি জীববৈচিত্রপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। এই খসড়া ভারতের পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের সাংবিধানিক ভাবধারার সম্পূর্ণ বিরোধী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, লাক্ষাদ্বীপের অখ্যাত প্রশাসক প্রফুল প্যাটেলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীতার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি এই দ্বীপে গুন্ডা আইন লাগু করেন অথচ এখানকার জেলগুলো প্রায় আসামি-শূন্য থাকে। পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কিত খসড়ায় বলা হয়েছে দুইয়ের অধিক সন্তানের অভিভাবক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবে না। পশু সংরক্ষণ আইনের দ্বারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দ্বীপে গোমাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও বহু অন্যায্য আইন এবং নিয়মকানুন দ্বীপের অধিবাসীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংগঠন মনে করে যে, অসাধারণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ এই দ্বীপকে মিথ্যা ‘বিকাশ’ এর নামে সরকার ক্ষমতাহীন করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। ভারতীয় সংবিধানে দেশের আদি বাসিন্দাদের অধিকার এবং বসবাস সম্পর্কিত বিধান স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। এই আইন সংবিধানের সর্বাঙ্গীন, সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রের ভাবধারার সম্পূর্ণ বিরোধী।
স্টুডেন্টস্ ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা জোরালো দাবি জানায় যে, লাক্ষাদ্বীপ ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি রেগুলেশন-২০২১ এর প্রস্তাবিত খসড়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে, বর্তমান প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসনিক দায়ভার সামলাতে স্পষ্টভাবে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে তাই তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দিতে হবে। সংগঠন এই প্রস্তাবিত খসড়ার বিরোধিতা করছে এবং এই আইন ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে লাক্ষাদ্বীপবাসীর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে। আমরা দেশের আপামর জনগণের প্রতি আহবান জানায় যে, সর্বদা জনগণের অধিকার রক্ষায় তৎপর থাকতে এবং পরিবেশ সংরক্ষনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। সংগঠন কোনভাবেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ‘বিকাশ’ এবং পর্যটন ব্যবস্থার নামে মানুষের অধিকার বিনষ্ট হতে দেবে না।