Friday, February 7, 2025
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

ক্যাব সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, ধর্মের ভিত্তিতে কারও নাগরিকত্ব নির্ধারণ হতে পারে না : তপোধীর ভট্টাচার্য

ছবি : সংগৃহিত

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) লোকসভায় পাশ হয়ে গেল। ক্যাবের বিরোধিতায় সোচ্চার হলেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। বিজেপির লোকজন দেশজুড়ে নৈরাজ্য করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ক্যাবের বিষয়ে দৈনিক সমাচারের সঙ্গে কথা বললেন তপোধীর ভট্টাচার্য। সবিস্তার শুনলেন – সামাউল্লাহ মল্লিক

দৈনিক সমাচার : নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

তপোধীর ভট্টাচার্য : এটা বিজেপির নতুন খেলা। হাত থেকে একটা একটা করে ইস্যু বেরিয়ে যাচ্ছে। রাম মন্দির চলে গেল, তারপর কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা চলে গেল। সুতরাং, দেশজুড়ে নৈরাজ্য চলছে এখন এবং এদেরই লোকজন সব নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। মেয়েদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই এদেশে। হাতে তো আর কিছু নেই! কিন্তু ওঁরা তো ঘৃণার রাজনীতি করে। ওঁরা বিদ্বেষী রাজনীতি করে। তাই নতুন করে বলছে গোটা দেশজুড়ে এনআরসি করবে। অমিত শাহ মনে করেন, বাঙালি মানেই উইপোকা। তাঁদের টিপে মারতে হবে। মানে বাঙালির অপরাধ হচ্ছে সে বাংলা ভাষায় কথা বলে। ভারতবর্ষের যেখানে যত বাঙালি আছে তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। এদিকে মুখে বলবে বাংলাদেশ আমাদের মিত্র রাষ্ট্র, বাংলাদেশি শব্দটা এই সরকারের কাছে গালাগালে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাপারটা মনে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, এই যে ক্যাবের ব্যাপারটা, এটা কমপ্লিটলি অগণতান্ত্রিক। আমাদের ভারতীয় সংবিধানের মৌলনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা ধর্মের ভিত্তিতে কারও নাগরিকত্ব নির্ধারণ হতে পারে না। কিন্তু তাঁরা সেটাই করছে এবং প্রকাশ্যে করছে। তাই গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের এককাট্টা হয়ে আবার একটা গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই লড়তে হবে। এ লড়াই হবে সংবিধান রক্ষার লড়াই, মানুষের মানবাধিকার রক্ষার লড়াই।

দৈনিক সমাচার : আমরা বারবার দেখছি বিভিন্ন মহল থেকেই বলা হচ্ছে যে, এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। কিন্তু সেই লড়াইটা কেমন হবে? কিছু প্রস্তুতি কি নিচ্ছেন আপনারা?

তপোধীর ভট্টাচার্য : অসমে তো আমরা লড়েই যাচ্ছি। তুমি তো জানোই, আমরা নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতি একাজ করছি। মঙ্গলবারই আমরা বসছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

দৈনিক সমাচার : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বাঙালি ইস্যু কিভাবে দেখছেন?

তপোধীর ভট্টাচার্য : বাঙালিদের কিন্তু বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক সফলতা কিন্তু ওঁরা পেয়ে গিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ডিভিশন, বর্ণহিন্দু-তফসিলি ডিভিসন, ঘটি-বাঙাল ডিভিসন অর্থাৎ যত রকমের ডিভিশন সম্ভব সবকিছু ওঁরা করে দিয়েছে। ওই পাজিগুলো জানে, দেশকে দেওয়ার মতো ওঁদের কিছু নেই। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা এরআগে এত খারাপ কোনওদিন হয়নি। আমরা সবাই জানি জিডিপি ৪.৫-এ নেমে গেছে। এবং তাঁদেরই লোক সুব্রহ্মণম স্বামীর কথা অনুযায়ী ওটা আসলে ১.৫-এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। যেকোনও দিন সব তাসের প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় বাঙালিকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সবচেয়ে বেশি সেক্রিফাইস করেছে। বাঙালিকে মনে রাখতে হবে বাঙালির কোনও হিন্দু মুসলমান হয় না। বাঙালিকে লড়তে হবে বাঙালি হয়ে। বাঙালি হওয়া মানে অসাম্প্রদায়িক হওয়া। বাঙালি হওয়া মানে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া। বাঙালি হওয়া মানে রেনেসাঁসের যে মূল কথা, ব্যক্তি স্বতন্ত্র, যুক্তিবাদ, আত্মমর্যাদা এগুলোর উপর নিজেদের চিন্তাভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করা। এটা বড় চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে এবং এটা বাঙালিই সবচেয়ে আগে গ্রহণ করুক।

 

সব খবর পড়তে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন – এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

error: Content is protected !!