Friday, November 22, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

যোগী রাজ্যে মুসলিম মহল্লায় ঢুকে পুলিশের তাণ্ডব, মহিলাদেরও মারধর

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : উত্তরপ্রদেশের শামলির তাপরানা গ্ৰামে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। ভাঙচুর করা হয়েছে মুসলিমদের বাড়ি। মারধর করা হয়েছে তাঁদের। মহিলাদেরও রেয়াত করেনি পুলিশ।

স্থানীয়দের বক্তব্য, ২৫ মে রাতে গো-হত্যার অভিযোগে পুলিশ আফজাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে এলে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের বচসা বাঁধে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে বাড়িতে ফিরেছিলেন আফজল। তখনই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে আসে। পুলিশ আফজলকে নিজের জেলায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। তল্লাশি অভিযান চলাকালে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিতর্ক শুরু হলে পুলিশ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা দায়ের করে এবং গ্ৰামবাসিদের আটক করে।

গ্ৰামবাসীদের কথায়, দু’দিন ধরে উত্তেজনা ছড়ানোর পর, ভোর ৩টা নাগাদ বিশাল পুলিশবাহিনী আকস্মিকভাবে গ্ৰামে ঢোকে এবং প্রতিটি বাড়িতে যথেচ্ছভাবে খানাতল্লাশি চালায়। মহিলাদের সঙ্গে অসভ্য আচারণ করে পুলিশ এবং টাকা, গয়নাগাটি লুঠ করে নিয়ে যায়। গ্ৰামবাসীদের উপর তারা নৃশংসভাবে অত্যাচার চালিয়েছে এবং অনেককে ধরে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এক প্রেস বিবৃতিতে সর্বভারতীয় ইমাম কাউন্সিলের (এআইআইসি) রাজ্য সভাপতি মাওলানা শাদাব বলেছেন, ‛আফজালকে গ্রেফতার করতে হানা দিয়েছিল পুলিশ (এদের একদল উর্দিধারী আর বাকিরা সাধারণ পোশাকে) কিন্তু তারা নৃশংসভাবে তাঁকে আক্রমন করে। গ্ৰামবাসীরা এমন আচারণের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ ৪০ জন এলাকাবাসীকে আটক করে এবং ওই গ্ৰামের প্রায় ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‛লকডাউনের সময় থেকেই পুলিশ হুমকি দিচ্ছিল গ্ৰামবাসীকে এবং দরিদ্র বিক্রেতাদের কাছে ঘুষ চাইছিল। ২৭ মে রাতে এক বিশাল পুলিশবাহিনী গ্ৰামে অতর্কিতে হানা দিয়ে বাড়িঘর তছনছ করে দেয়, মহিলা ও পুরুষদের শ্লীলতাহানি করে এবং টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে। তাপরানা গ্ৰামের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ছেলে গুয়াজাহাত খানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ইমাম সংগঠনের প্রধানের বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আফজালকে গ্রেফতার করতে এসে পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে গ্ৰামবাসীদের বাড়িঘর তন্নতন্ন করে তল্লাশি করে এবং লুঠপাট চালায়।

আরএলডি অখিল বনশল এই ঘটনা যে সত্য তা মেনে নিয়ে বলেন, ‛গ্ৰামবাসীদের অভিযোগ সত্য এবং পুলিশের উচ্চস্তরে এর তদন্ত হওয়া দরকার।’ শামলি প্রেস ক্লাবের জেলা সভাপতি রামবীর রাঠিও এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। মুজফফরর নগর-কেন্দ্রীয় এক মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী রবিশ আলম বলেন, গ্ৰামবাসীদের মধ্যে এখন শুধু ভয় আর আতঙ্ক। ওই এলাকার বহু বাসিন্দাকে আটক করে কঠিন মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ‛আক্রমণের শিকার হয়ে এবং উচ্চস্তরীয় পুলিশি সক্রিয়তার ফলে অনেক গ্ৰামবাসী অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।’

তাপরানার যে ধরনের ছবি ও ভিডিও আসছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ২০১৯ সালেও ঠিক এমনই পুলিশি নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়িয়েছিল। এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানবাধিকার বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। আইন ও শৃঙ্খলারক্ষার নামে তা বারবার অপহরণ করা হয়, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশি নৃশংসতা এখন আর নতুন কিছু নয়। যদি পুলিশই এমন কাজ করে তাহলে আমরা কোথায় সুবিচার চাইতে যাব?

 

তাপরানার আর এক বাসিন্দা যিনি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও সেই পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‛মহিলাদেরও ছাড় দেয়নি পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে অসভ্য আচারণ করেছে। কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না। পুরুষ পুলিশরাই গ্ৰামের মহিলাদের হেনস্থা করেছে। তারা বিষয় – সম্পত্তিও নষ্ট করে দিয়ে গেছে। গোটা ঘটনাটাই ভীষণ ভয়াবহ। আমরা সবাই আতঙ্কিত।’ পুলিশই যদি এমন আচরণ করে আমাদের সঙ্গে, তাহলে আমরা কার কাছে অভিযোগ জানাতে যাব?

এই গ্ৰামের বাসিন্দা আয়াজ খান জানিয়েছেন, ধ্বংসলীলা চলছে শামলির এসপির উপস্থিতিতেই। গ্ৰামবাসীরা সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে। তারা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং গ্ৰামবাসীদের সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!