দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : গুজরাতে বিলকিস বানুর উপরে ২০০২ সালে যারা পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল, তার শিশুকন্যাকে ও পরিবারের লোকজনকে যারা হত্যা করেছিল সেই অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার বিকেলে গাইঘাটায় ওই ইস্যুর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে মিছিল ও সমাবেশে শামিল হন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের ডাকে এদিনের এই প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, ‘গুজরাতে দণ্ডিত অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালে গোধরার ঘটনা, অনেকে জানেন, অনেকে জানেন না। গোধরায় যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটনা ঘটেছিল, তখন কে ছিল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী? তিনি হলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী। তখন গুজরাতে যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তিনি আজকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সরকারের আমলে বিলকিস বানুকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার করা হল। তাকে গণধর্ষিতা হতে হল। তার পরিবারের সদস্যদেরকে খুন করা হয়েছিল। সে সন্তানসম্ভবা ছিল, সেই অবস্থায় তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল, আপনার শরীরের ভিতরটা জ্বলছে না?’
তিনি বলেন, ‘মেয়ে মানে একটা বিলকিস নয়, মেয়ে মানে বিলকিস সবাই। এই জ্বালাটা নিজের মধ্যে আরও প্রচলিত করুন, তখন দেখবেন, একটা বিলকিসের বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদে লক্ষ লক্ষ বিলকিস চেঁচিয়ে উঠছে, গর্জে উঠছে। গুজরাটের ওই দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ‘সংস্কারি ব্রাহ্মণ’ বলে অভিহিত করে লাড্ডু, খাইয়ে, টিকা পরিয়ে দিয়ে সম্মান জানানো হল, এই হচ্ছে তাদের চিন্তার বিষয়! সেজন্য আমরা বলতে চাই, এরা যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ায় এদের বিভ্রান্তির শিকার হবেন না।’ মেয়েদের একযোগে, একসাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে যারা গণধর্ষণ করেছিল, গত ১৫ আগস্ট গুজরাতে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে সেই ১১ জন। দাঙ্গাবাজ দুর্বৃত্তরা নারকীয়ভাবে তার তিন বছরের শিশু কন্যাকে আছড়ে হত্যা করেছিল তার চোখের সামনে। এ সময়ে তার পরিবারের মোট ৮ জনকে হত্যা করেছিল ঘাতকরা। ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সেই ১১ জনকে সম্প্রতি মুক্তি দেওয়া হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এদিন গাইঘাটায় প্রতিবাদে মিছিলে হাঁটার সময়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গুজরাতে দণ্ডিত অপরাধীদের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে ছেড়ে দেওয়া এবং তার সাথে বাগদায় যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে বিএসএফের দ্বারা, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এখতিয়ারভুক্ত সেই সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী কিছু বলছেন না। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আমরা সারা বাংলাজুড়ে করেছি, আজকে এখানে ‘বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস’ করছে।’
এদিন কয়েক হাজার মহিলা গাইঘাটায় ওই প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। এ সময়ে তাঁরা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একইসঙ্গে তারা পেট্রোপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের ডাকে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পাশাপাশি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শ্যামল রায়, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী ইলা বাগচি, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল আইএনটিটিইউসি সভাপতি নারায়ণ ঘোষ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।