Thursday, February 6, 2025
Latest Newsআন্তর্জাতিকফিচার নিউজ

বন্দুকের বদলে হাতে পবিত্র কুরআন, অশান্ত আফ্রিকায় শান্তি ফেরাতে ইসলাম প্রচার করছে সেনাবাহিনী

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: বন্দুকের বদলে হাতে পবিত্র কুরআন, অশান্ত আফ্রিকায় শান্তি ফেরাতে একমাত্র পথ এখন ইসলামের বানী প্রচার করা। আফ্রিকার দেশ কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তি ফেরাতে সেই কাজ করে শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে গিয়ে বন্দুক এবং গোলা-বারুদের বদলে তাঁরা বেছে নিয়েছেন পবিত্র কুরআন তথা শান্তির ধর্ম ইসলামকে। ডিউটির পর কঙ্গোর স্থানীয় লোকজনকে তাঁরা ইসলাম সম্পর্কে বার্তা দিচ্ছেন। ইসলামের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছেন। মানুষকে তাঁরা বোঝাচ্ছেন কীভাবে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এলে শান্তি ফিরতে পারে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। কঙ্গোবাসীকে তাঁরা বলছেন,হিংসার পথ পরিহার করে এবং ভালোবাসাকে হাতিয়ার করে কীভাবে মানুষের মন জয় করতে হবে। পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রশমণে সহিষ্ণুতার পাঠ শেখাচ্ছেন শান্তিরক্ষী বাহিনীর কয়েকজন জওয়ান। তবে রাষ্ট্রসংঘের তরফে যেহেতু শান্তি ফেরাতে ইসলাম প্রচার করতে অনুমোদন দেওয়া হয়নি, তাই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও উঠছে। ধর্ম প্রচার এবং ধর্মান্তরণ করে তাঁরা রাষ্ট্রসংঘের মিশনকে লঙ্ঘন করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এশিয়ার কোনও এক দেশ থেকে তাঁরা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্য হিসেবে যান। সেখানে গিয়ে আফ্রিকার এই দুই দেশে তাঁরা শান্তিকামী মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন। পাশাপাশি কয়েকটি মসজিদ নির্মাণের কাজেও তাঁরা উদ্যোগ নেন বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, দুই প্রতিবেশী দেশেই মুসলিমরা সংখ্যালঘু। তাদের জনসংখ্যা ১০ শতাংশের মতো। কিন্তু দু’টো দেশে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, জঙ্গি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র হামলা, সন্ত্রাস লেগেই থাকে। তাই বছরভর সেখানে রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকে।

জানা গিয়েছে, কর্নেল সাকিব মুস্তাকি নামে এক ডেপুটি কমান্ডার পদমর্যাদার সামরিক অফিসার প্রথম সেখানে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করেন আরও দু-একজন মুসলিম জওয়ান। তাঁদের বিরুদ্ধে ইসলাম প্রচার ও ধর্মান্তরণের অভিযোগ ওঠায় সাকিব বলেন, এখানে গুলিগালা চালিয়ে যতখুশি মানুষ হত্যা করলে, কোনও অসুবিধে নেই। তখন বলা হবে,শান্তি ফেরাতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে শান্তিরক্ষা বাহিনী। অথচ মানুষ হত্যা না করে বরং বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি-সম্প্রীতি ফেরাতে মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করলেই যত দোষ। তিনি এও বলেন, যেকোনও দেশে যেকোনও মানুষ স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু বলপ্রয়োগ, হুমকি বা জবরদস্তি করা হলে অবশ্যই তা অপরাধ।

তাঁর বক্তব্য, আমরা ডিউটিরত অবস্থায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু অবসর সময়ে বাজারে ঘোরাঘুরি করি,স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গল্পগুজব করি, মত বিনিময় ও ভাবের আদান-প্রদান। এর মাধ্যমেই কেউ কেউ ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে তাদের সঙ্গে একটু আধটু আলোচনা হয়। এর বেশি কিছু নয়। কারণ, আমরা আমাদের দায়ত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আইনের বাইরে আমরা কিছু করি না। তাঁদের আলোচনা শুনে ওই দুই দেশের মানুষ ছাড়াও তাঁদের কয়েকজন সহকর্মীও ইসলাম সম্পর্কে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণও করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর পালটা অভিযোগ হল, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অসহায় ও অভুক্ত মানুষের ওপর বর্বরতা, সহিংসতা এমনকী নারী ও শিশুদের ওপর অবাধে যৌন নির্যাতন চালালেও বেকসুর খালাস হয়ে যান। তাদের নিয়ে এত হইচই হয় না। অথচ কাজের ফাঁকে গল্পগুজব করতে করতে ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করাকে যেভাবে রং চড়িয়ে দেখানো হচ্ছে যেন,আমরা কতই না গুরুতর অপরাধ করে ফেলেছি।

Leave a Reply

error: Content is protected !!