দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের সমাবেশকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উক্ত সমাবেশে অংশগ্রহণ করা বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু ঘটেছে ৮ জনের। কেন্দ্র সরকার, দিল্লি সরকার, মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল সাইটে এই সমাবেশ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। সমগ্র বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ারও অপপ্রচেষ্টা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
আসলে কী ঘটেছিল তবলিগী জামাতের নিজামুদ্দিন মার্কাজের সমাবেশে?
প্রথমত মিডিয়া অথবা ইসলামবিরোধী শক্তি একটা কথা বলছেনা যে, করোনাতংকের জন্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশে ২২ মার্চ জনতা কার্ফিউ ও ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করার এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ১৬ মার্চ সব ধরনের ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আগেই দিল্লির মসজিদটিতে সমাবেশ আরম্ভ হয়েছিল।
গত ১৩ মার্চে উক্ত ধর্মীয় কার্যে অংশগ্রহণের জন্যে দেশ-বিদেশের ৩ হাজার ৪০০-রও বেশি মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এরপর ২০ মার্চ ১০ জন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক এসে সমাবেশে যোগদান করেন। ২৩ মার্চ নিজামুদ্দিন থেকে ১৫০০ মানুষ চলে যান। ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সারা ভারতে ২১ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করার ফলে বাকিরা নিজামুদ্দিনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন।
অন্যদিকে, সে দিনই দিল্লি পুলিশ নিজামুদ্দিন খালি করার নির্দেশ দেন। উক্ত লোকেরা সেখানেই বন্দী হয়ে যান, কারণ ২২ মার্চ থেকে দেশে রেল চলাচল বন্ধ করা হয়। ২৫ মাৰ্চ লকডাউন অমান্য করে আবদ্ধ হয়ে থাকা ১ হাজার লোককে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করার জন্যে জামাত কৰ্তৃপক্ষ এসডিএম কার্যালয়ে গিয়ে একটি আবেদন পত্র জমা দেন।
এদিকে ২৬ মার্চ তবলিগীতে অংশগ্রহণ করা একজন কাশ্মীরীর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে তেলেঙ্গানায় প্রত্যেকের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। ২৭ মার্চ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অন্য ৬ জন লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়া সন্দেহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হরিয়ানার ঝাজারে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। ২৮ মার্চ এসডিএম এর সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দল মারকাজ পরিভ্রমণ করে ৩৩ জন লোক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দিল্লির রাজিব গান্ধী কেন্সার হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখেন। সেদিনই লাজপথ নগরের এসিপি শীঘ্রই মারকাজ খালি করার অন্য একটি পত্র প্রেরণ করেন। ২৯ মার্চ মারকাজের কৰ্তৃপক্ষ এসিপি-র পত্রটি গ্রহণ করে জানায় যে, লকডাউন জারি হওয়ার পর সেখানে কোনও ব্যক্তিকে সমবেত হওয়া তো দূরের কথা প্রবেশ করতেও দেওয়া হয়নি।
সেদিনই নয়া দিল্লি পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ মারকাজ থেকে ব্যক্তিদের বের করে চিকিৎসালয়ে ভর্তি করার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা আরম্ভ করে। মসজিদ কৰ্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, তাঁরা সেখানে সমাবেশ ঘটা লোকেদের ঘরে প্রেরণ করার জন্যে গাড়ী চলাচলের অনুমতি চেয়ে পুলিশ তথা সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ বা সরকার পক্ষ থেকে লকডাউন চলার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়নি।