নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, কলকাতা: দেশজুড়ে একনাগাড়ে তান্ডব চালিয়েই যাচ্ছে আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর থেকেই তাণ্ডব বেড়েছে উগ্ৰ হিন্দুত্ববাদীদের। মোদী সরকার নোটবন্দি, জিএসটি, সিএএ, এনআরসি, তিন তালাক, ৩৭০ ধারা সহ একাধিক বিলপাস করে দেশের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা তৈরি করেছে। সেই অস্থিরতার শিকার পশ্চিমবঙ্গও। সামনেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে বিজেপি রাজ্যজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে। এমনই এক নাজুক পরিস্থিতির মোকাবিলায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে রক্ষা করা যাবে এবং কোন পথে বিজেপির মোকাবিলা করা সম্ভব? এই বিষয়ে মুসলিম নেতাদের ৮ পরামর্শ দিলেন অল ইন্ডিয়া সুন্নত অল জামাতের সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল মাতিন।
প্রথমে তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম অবলম্বী প্রত্যেক দল নিজ নিজ মসলার উপরে আমল করবেন। অন্য দলের মসলার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে নিজেদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। তারপর তিনি বলেন, দেশ ও রাজ্যের বর্তমান দূরাবস্থার জন্য যে সমস্ত রাজনৈতিক দল দায়ী, অপকর্মের গভীরতার ভিত্তিতে তাদের তালিকা তৈরি করা। তাদের মধ্য থেকে দেশের প্রধান শত্রুকে চিহ্নিত করে ছোট ছোট শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করে বড় শত্রুকে নির্মূল করার জন্য শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তিনি তিন নম্বর পথ হিসেবে বলেন, নিঃশর্তভাবে ভারতে বসবাসকারী সকলকে নাগরিকত্ব দিতে হবে এই আন্দোলনে সারা দেশ উত্তাল। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বহু রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিজেপির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম করছেন। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নারী সমাজ ও সংগ্রাম করছেন। আমাদের সঠিক লক্ষ্যমাত্রা সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
মুফতি মাতিন আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে উল্লেখ যোগ্য ধর্মনিরপেক্ষ তিনটি দল তৃণমূল, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। আসন্ন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী এই তিনটি দল যদি আসন সমঝোতা করে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে লড়তে পারে তাহলে নিশ্চিত ভাবে বিজেপিকে ধরাশায়ী করা যাবে। এই লক্ষে তৃণমূল, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কে আসন সমঝোতা করতে বাধ্য করাতে হবে। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, দিল্লির মসনদ থেকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে উত্খাত করতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল ধর্মের অবিজেপি মানুষদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই সঙ্গে আরএসএস-বিজেপির রাজনীতি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের উপর নির্ভরশীল। তারা জন্মলগ্ন থেকে বিভাজনের রাজনীতি করছে। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক বিভাজনের ফলে বিজেপিই লাভবান হবে। আমরা হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি না করে অবিজেপি সকল ধর্মের মানুষের ঐক্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে।
মুফতি মাতিন বলেন, আমরা যতোই আন্দোলন করি না কেন ভোট যুদ্ধে বিজেপিকে পর্যদুস্ত করতে না পারলে আমাদের সব আন্দোলন মাঠে মারা যাবে। সুতরাং গভীর ভাবনা চিন্তা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি সুনিদিষ্ট করতে হবে। শেষ নম্বর পথ হিসেবে মাতিন বলেন, বাবা সাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের দিয়ে যাওয়া সংবিধানই আমাদের সংগ্রামের মূল হাতিয়ার। সর্বশক্তি দিয়ে সংবিধানের মৌলিক পরিকাঠামো রক্ষা করে দেশকে বাঁচাতে শপথ নিতে হবে।