দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ‘ওয়াই টু কে’ সঙ্কটের কথা উল্লেখ করার পর থেকে ২০ বছরের পুরনো সেই ঘটনা নিয়ে ফের দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, কী ছিল ‘ওয়াই টু কে’ সমস্যা? বিশ্বজুড়ে কেন এই বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা?
এই শতাব্দী শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে কম্পিউটারে তারিখের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, ২০০০ সাল শুরু হওয়ার পর কম্পিউটার পুরনো তারিখই মনে রাখবে। তার ফলে হিসেবের গোলমাল হবে। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি কম্পিউটারে লিখলেন, ২০.০৩.০১। কম্পিউটার এই তারিখটিকে ২০.০৩.১৯০১ ধরে হিসেব করবে। কারণ, ২০০০ সাল শুরু হওয়ার আগে সাধারণ বছর চার সংখ্যায় লেখা হত না। ৯৮,৯৯ এভাবেই লেখা হত। কিন্তু ২০০০ সাল থেকেই চার সংখ্যায় বছর লেখা শুরু হয়। এর ফলে সমস্যা হবে বলে মনে করছিলেন অনেকে। এই আশঙ্কাতেই ঘুম উড়ে গিয়েছিল তাবড় বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ীদের।
এই প্রথম কম্পিউটারে তারিখ লেখার জন্য ৪ ডিজিট ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দেয়। সব সফটওয়্যার পরিবর্তন করার একটি হিড়িক পড়ে গেল। সারা পৃথিবীতে সকল প্রতিষ্ঠান তাদের সফটওয়্যার (এবং ক্ষেত্র বিশেষ হার্ডওয়্যার) আপগ্রেড করার জন্য মরিয়া হয়ে গেল। এটাকে বলা হলো ‘মিলিনিয়াম বাগ’।
উন্নত বিশ্বে তখন ভয় লেগে গেল। আর ব্যাপারটা এমন যে, ২০০০ সাল না আসার আগে ঠিক বোঝাও যাবে না কী হবে। কেউ কেউ ভবিষ্যৎবাণী করলেন যে, রাত ১২টার পর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সবার ভেতর কেমন এক ধরনের শঙ্কা। সবার তথ্য মুছে যাবে, জন্মদিন পরিবর্তন হয়ে যাবে, ব্যাংকের টাকা চলে যাবে, ক্রেডিট কার্ডে সমস্যা হবে, আকাশ থেকে স্যাটেলাইট খুলে মাটিতে পড়তে পারে, এমন হাজারও ভয় নিয়ে সময় কাটাত এই পৃথিবী। অনেকেই ভয়ে ব্যাংক থেকে টাকাও তুলে ফেললেন।
আসলে তেমন কিছুই হলো না। তবে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে প্রচুর ব্যবসা হলো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের বাজেট বরাদ্দ করে রেখেছিল। বিলিয়ন ডলারের বাজার। সেগুলো খরচ করার জন্য উন্মাদনা। টাকা খরচ হোক, কিন্তু সিস্টেম ঠিক থাকা চাই। সেই সুবাদে অনেক কাজ উন্নত বিশ্ব থেকে উন্নয়নশীল দেশ যেমন ভারত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপ ইত্যাদি দেশগুলোতে চলে গেল। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। যে যতটা পারছে নিয়ে নিচ্ছে। যারা নিজেদের লোকবল সঠিকভাবে তৈরি করতে পেরেছিল, তারাই সিংহভাগ পেল।
দু’দশকের পুরনো সেই সমস্যার কথাই উঠে এল গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের কথা বলতে গিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতার কথা উল্লেখ করেন। যা ছিল আসলেই একুশ শতকের সবথেকে বড় মিথ্যাচার।