দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি থেকে গ্রুপ ডি সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ১৩৫ কোটি টাকার প্রতারণা করার অভিযোগে অলোক মাইতি নামে এক যুবককে ময়না থেকে বুধবার গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে তমলুক আদালতে তোলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর।
তমলুক পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত অলোক মাইতি ময়নার আড়ংকিয়ারানার বাসিন্দা। কয়েক বছর ধরেই প্রাইমারি, আপার-প্রাইমারি এমনকি গ্রুপ ডির বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন অলোক। স্থানীয় এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে পাঠান তদন্তকারী অফিসাররা। প্রায় চার ঘণ্টার ম্য়ারাথন জিজ্ঞাসার পর অলোকের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। তারপরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পুলিশের খাতায় আগেও প্রতারণার নামে অভিযোগ উঠেছিল অলোকের বিরুদ্ধে। কিন্তু, যথোপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি।
তদন্তকারীদের দাবি, অলোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-এর স্টেটমেন্ট থেকে এবং বেশ কিছু স্ট্যাম্পপেপারে লিখিত চুক্তিপত্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার হিসেব মিলেছে। গত সাত দিনে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। এই বিপুল অংকের টাকার সিংহভাগটাই গেছে রাজ্যের কয়েকজন প্রভাবশালীদের কাছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন অলোক। সেই টাকার সিংহভাগ যেত রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের পকেটে। তবে কে বা কারা এর নেপথ্যে রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, প্রাইমারি আপার প্রাইমারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সুপারিশ করা যাবেনা, মেধার ভিত্তিতে যোগ্যরা চাকরি মিলবে। প্রশ্ন উঠছে তারপরেও কী করে এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অলোক? তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অলোককে টাকা দিয়ে অনেকেই চাকরি পেয়েছিল। সেই সুপারিশ ধরেই অনেক চাকুরিপ্রার্থী যোগাযোগ করতেন অলোকের সঙ্গে। এইভাবে, কোটি টাকার প্রতারণা করেন অলোক।
উল্লেখ্য, অলোক মাইতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নির্বাচন আবহেই সুর চড়িয়েছিলেন বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সরকার এলে অলোক মাইতিকে পুলিশের হাকে তুলে দেওয়া হবে এমন মন্তব্যও করেছিলেন শুভেন্দু। সম্প্রতি বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্ডা বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ। অলোক বিজেপির লোক ছিল না। বরাবরই তৃণমূল করে এসেছে। আজ ধরা পড়েছে।”
পাল্টা শাসক শিবিরের দাবি, অলোক মাইতির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। বরাবরই শুভেন্দুর হয়ে কাজ করেছেন অলোক। শুধু তাই নয়, বিজেপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে বহুদিন ধরেই গোপন যোগাযোগ ছিল অলোকের। অভিযুক্ত অলোক মাইতিকে দশদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে তমলুক জেলা আদালত।