Wednesday, November 20, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

‛করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি শহিদও হও দুঃখ করব না’ – রোযাদার ছেলেকে উৎসাহ বাবার

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : দেশজুড়ে তুমুল ইসলামোফোবিয়ার মধ্যেও করোনা আক্রান্তদের সেবায় নিজের প্রাণ বাজি রেখে এগিয়ে আসছেন মুসলিম চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা। আজ এরাই দেশের নায়ক। এমনই একজন জহিদ আবদুল মজিদ। তিনি থাকেন কাশ্মীরে।

অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে দুর্বল আলোয় ভালো করে ঠাহর হচ্ছিল না কিছু। তাই পরনের পিপিই খুলেই রোগির দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। সেই অবস্থায় রোগীর শ্বাসনালিতে লাগানো নল ঠিক করে দিলেন। লকডাউনের মধ্যেও গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার মধ্যেই এ ভাবে মানবিকতার পরিচয় দিলেন দিল্লির ‛অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স বা এইমস’-এর এক তরুণ চিকিৎসক।

আদতে কাশ্মীরের অনন্তনাগের ওয়ানিহামা-ডায়ালগাঁওয়ের বাসিন্দা জহিদ আবদুল মজিদ গত দু’ বছর ধরে এইমসে আবাসিক চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা কাজ সেরে রোযা ভাঙতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেইসময় আচমকা ফোন আসে তাঁর কাছে। বলা হয়, অ্যাম্বুল্যান্সে করে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক করোনা রোগিকে। সেখানে তার সাহায্য লাগবে।

ফোন পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে যান জহিদ আবদুল মজিদ। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের কাছে গিয়ে দেখেন, রোগীর শ্বাসনালিতে যে নল লাগানো রয়েছে, সেটি ঠিক ভাবে বসেনি। তার জেরে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রোগীর। অবিলম্বে সেটি ঠিক না করতে পারলে রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারতেন। তাই আগুপিছু না ভেবে নিজেই হাত লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন জহিদ।

কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের স্তিমিত আলোয় ঠিকভাবে কিছু ঠাহর হচ্ছিল না। তার উপর পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরে থাকায়, স্পষ্ট ভাবে দেখতেও অসুবিধা হচ্ছিল। তাই পিপিই খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মতো প্রথমে ফেস শিল্ড খুলে রাখেন তিনি। খুলে ফেলেন চোখের গগলসও। শুধুমাত্র এন- ৯৫ মাস্ক পরা অবস্থায় নল ঠিক করতে হাত লাগান তিনি।

কাজ মিটে গেলে নিজেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পিপিই খুলে ফেলার বিষয়টি জানান জহিদ। রোগীর সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার পাঠানো হয়। এখনও সেখানেই রয়েছেন জহিদ। আর ওই রোগী রয়েছেন ভেন্টিলেটরে। বিষয়টি সামনে আসার পর সংবাদমাধ্যমের তরফে জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‛আজই বাবা ফোন করেছিলেন। বললেন, করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি মারাও যাই, উনি দুঃখ করবেন না। অনেকের জীবন বাঁচিয়ে ছেলে শহিদ হয়েছে বলে মনে করবেন। বাবার সঙ্গে কথা বলে বুকের উপর থেকে পাথরটা নেমে গেল। যে ভাবে ওই সময় এগিয়ে গিয়েছিলাম আমি, বাবা-মা তার প্রশংসাই করছেন।’

তবে এত কিছুর পরেও তিনি শুধু কর্তব্যই পালন করেছেন বলে জানান জহিদ। তিনি বলেন, ‛পবিত্র রমযান মাস চলছে। একজন মূমূর্ষ মানুষকে সাহায্য করেছি। ডাক্তার হিসাবে এবং মানুষ হিসাবে কোনও রোগির ক্ষতি হোক এমনটা চাইব না। তবে এইমসে সিনিয়রদেরও এ ভাবেই এগিয়ে যেতে দেখেছি।’ তবে পিপিই না পরে করোনা রোগীর কাছে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাই কেউ যেন এমন পদক্ষেপ না করেন, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেন জহিদ।

 

Support Free & Independent Journalism

Leave a Reply

error: Content is protected !!