দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: গুজরাতে তখন ক্ষমতায় মোদী সরকার। বিজেপির শাসনে জঙ্গি সন্দেহে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাট এটিএস, নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করতে বসিরের লেগে গেল প্রায় ১১ বছর৷ এর মধ্যে হারিয়েছেন নিজের বাবাকে৷ তিনি জেলে থাকায় অবস্থায় বিয়ে হয়ে গিয়েছে দুই বোনের! কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে শ্রীনগরে বাড়ি ফিরলেন বসির আহমেদ।
১৩ মার্চ, ২০১০ সালে গুজরাটের আনন্দ থেকে সে রাজ্যের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড গ্রেফতার করেছিল বসিরকে৷ প্রায় ১১ বছর ধরে ইউএপিএ আইনে বসিরের বিরুদ্ধে মামলা চলে৷ তারপরই সম্প্রতি নির্দোশ প্রমাণিত হয়েছেন বসির৷
গুজরাট এটিএস অফিসারদের বক্তব্য ছিল, আনন্দে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল বসির৷ মাঝে মাঝেই ক্যাম্প থেকে কোথাও গায়েব হয়ে যেতেন আনন্দ। সবার থেকে আলাদা হয়ে একাধিক ফোন কল করতেন৷ মেডিক্যাল ক্যাম্পের পক্ষ থেকে যে হস্টেলে থাকতেন বসির সেখানের ল্যাপটপ থেকে পাকিস্তানে মেইল পাঠাতেন। জঙ্গিদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা এবং গুজরাটে জঙ্গি রিক্রুটমেন্টের কাজ করার অপরাধে বসিরকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাট এটিএস।
গুজরাট এটিএস এবং কোর্টকে বসির জানিয়েছিলেন, ১৫দিনের জন্য একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে গুজরাটের আনন্দে এসেছিলেন তিনি৷ ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়ার পর কীরকমভাবে রাখতে হয় রোগীকে সে নিয়েই আলোচনা ও ট্রেনিংএর জন্য গুজরাটের আনন্দে চলছিল ক্যাম্পটি৷ এখান থেকে ট্রেন নিয়ে ফিরে গিয়ে শ্রীনগরে নিজের বাড়িতে একটি পোস্ট-ক্যানসার কেয়ার সেন্টার খোলার ভাবনা ছিল বসির আহমেদ বাবা-র।
১১ বছর সময় লাগলেও মুক্তির আশা ছাড়েননি বসির৷ সম্প্রতি গুজরাটের কোর্ট বসির মামলায় রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছে, বসির আহমেদ বাবার বিরুদ্ধে আনা এটিএসের অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারেনি৷ বসিরের ল্যাপটপ থেকে জঙ্গিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে মুক্তি দিয়েছে কোর্ট৷
সম্প্রতি আনন্দ থেকে শ্রীনগর ফিরেছেন বসির৷ বাবার মৃত্যুর সময় থাকতে পারেননি পাশে তাই কষ্ট রয়েছে৷ বাদ পড়েছেন বোনেদের বিয়ে থেকেও, এবার তাই ভাইয়ের বিয়ে দিতে চান তিনি৷ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন এই এগারো বছরে মুক্তির আশা ছাড়েননি তিনি৷ দোষ করেননি তাই জানতেন একদিন ঠিক মুক্তি পাবেন৷
এগারো বছরের জেল, তাও আবার ভুল কারণে! যে কোনও লোকের ইচ্ছাশক্তি ভেঙে দিতে পারে৷ কিন্তু বসিরকে জেলে থেকেও লড়েছেন৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞান এম এ সম্পূর্ণ করেছেন জেল থেকেই৷ তাঁর এই লড়াইয়ের বেশির ভাগ কৃতিত্ব নিজের উকিলকে দিতে চান বসির৷ যিনি বিনা পয়সায় এই ১১ বছর ধরে বসিরের হয়ে লড়েছেন৷ কিন্তু এখন প্রশ্ন একটাই এতো বড় লম্বা সময় নষ্টের দায় কে নিবে?