Friday, November 15, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

ঝড়ে বাড়ি অক্ষত, তবু ক্ষতিপূরণ তালিকায় তৃণমূল নেতার নাম! ব্যাপক দুর্নীতি সাঁকরাইলে

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : আমফানে বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। তবু ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম উঠেছে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যর। সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা বলে কথা, তা কি ছেড়ে দেওয়া যায়? যে মানুষগুলো আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাঁদের থাকার জায়গাটুকুও নেই, তাঁদের অনেকের নাম নেই ক্ষতিপূরণের তালিকায়। অথচ ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম উঠেছে একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের। এমনই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া বাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথমে দেওয়া হবে কুড়ি হাজার করে টাকা। তাছাড়াও ১০০ দিনের প্রকল্পের তাঁদের নাম নথিভূক্ত করে আরও ২৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে মেরামতির মজুরি হিসাবে। ঝোড়হাট পঞ্চায়েতেও ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়। কিন্তু এই তালিকা ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকাশিত হওয়ার পরেই জলঘোলা শুরু হয়। দেখা যায় এই তালিকায় এমন নামও আছে যাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি।

শুধু তাই নয়, এই এলাকা থেকে নির্বাচিত বেশ কয়েকজন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের নাম এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও তালিকায় স্থান পেয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির যে সব সদস্যের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে তাঁদের বাড়ির যে কোন‌ও ক্ষতি হয়নি তা তাঁরা নিজেরাই জানিয়েছেন। অসীমা সাধুখাঁ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আমারও নাম আছে। আমার বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। তা সত্ত্বেও তালিকায় নাম দেখে খুব অপমানিত বোধ করি। কেন এমন হল তা জানতে চেয়ে বিডিওকে চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি জেলাশাসককেও জানিয়েছি।’

অচিন্ত্য দাস নামে তৃণমূলেরই আরও এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বলেন, ‘আমাদের দলের একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আছে।’ তাঁর অভিযোগ, ‘শুধু পঞ্চায়েত সমিতির কয়েকজন সদস্য নন, এমন বহু সাধারণ মানুষের নাম তালিকায় আছে যাঁদের নতুন পাকা বাড়ি। কোনও ক্ষতি হয়নি। আমি স্থানীয় সাংসদ এবং জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করব।’ এমন দুর্নীতি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের সাফাই, ‛প্রধানেরা যে তালিকা দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতেই প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। এতে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও হাত নেই।’

এদিকে পঞ্চায়েত সমিতির অধীন তৃণমূল শাসিত ঝোড়হাট পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলা সদর তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায়কেও। অভিযোগ পাওয়ার পর মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘অভিযোগটি গুরুতর। জেলাশাসককে অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে বলেছি। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে টাকা বিলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’ বিডিও সন্দীপ মিশ্র ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি।

এই পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের তৃণমূল মনোনীত কো-মেন্টর অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘শুধু ঝোড়হাট নয়, সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা করেছে তাতে দূর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য যে আম্তরিক চেষ্টা করছে সাঁকরাইলে তার ঠিক বিপরীত কাজ করা হচ্ছে। এত বড় দুর্নীতি রাজ্যের কোথাও হয়নি বলে আমাদের ধারণা।’ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!