Monday, February 24, 2025
ইতিহাসফিচার নিউজ

ক্রুসেড যুদ্ধ – শত্রু ক্রুসেডারদের চোখেও তিনি ছিলেন “দি গ্রেট সালাহউদ্দিন”

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : শুধু যুদ্ধ জয়ই নয়, বীরত্ব আর মহানুভবতায় শত্রুর চোখেও তিনি ছিলেন “দি গ্রেট সালাহউদ্দিন”। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ৫৩২ হিজরির (১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে) মেসোপটেমিয়ার তিকরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুবী। সালাহউদ্দিন হচ্ছে লকব, যার অর্থ “বিশ্বাসের ন্যায়পরায়ণ”। তিনি কুর্দি বংশোদ্ভুত এবং মিসর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান।

সালাউদ্দিন আইয়ুবী বিভিন্ন বিষয়ে অনেক পারদর্শী ছিলেন। ইউক্লিড, পাটিগণিত, আইন এবং ধর্মীয় বিষয়ে খুব ভাল জানতেন। তাছাড়া আরবের ইতিহাস ও আরব ঘোড়ার রক্তধারা সম্পর্কেও তাঁর অনেক জ্ঞান ছিল। তিনি কুর্দি ও তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছোট থেকেই বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের স্বপ্ন দেখতেন। ইসলামি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলকে (বায়তুল মুকাদ্দাস) ক্রুসেডারদের হাত থেকে প্রায় ৯০ বছর পর রক্ষা করে মুসলমানদের ইসলামি রাষ্ট্রের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করেন।

সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক-এর মাদ্রাসায় পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যার জ্ঞান লাভ করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি যুদ্ধ কৌশল শেখার প্রতি সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বেশ ঝোঁক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই বিষয়ে আগ্রহের জন্য তার চাচা তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। অল্প সময়ের ব্যবধানেই তিনি এ বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ৫৪৯ হিজরিতে সালাহউদ্দিন ও তার পিতা দামেস্কের রাজ দরবারে চাকরি গ্রহণ করেন।

 

দ্বাদশ শতাব্দীর আগ থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মান ইসলামি রাষ্ট্র গুলো ভেঙ্গে ফেলে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে চক্রান্তে মেতে উঠে। সাথে সাথে তারা চালাতে থাকে নৃশংস আক্রমণ। মুসলিম আমির, গভর্নরদেরকে তাদের মূল লক্ষ্য- উদ্দেশ্য থেকে ঘুরিয়ে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠে তারা। তারই ফলাফলে মুসলিম জাতির কাছ থেকে খৃষ্টান সম্প্রদায় ছিনিয়ে নেয় তাদের প্রাণের স্পন্দন প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।

১১৬৩ সালে ক্রুসেডারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্য লাভের জন্য আইয়ুবীকে মিসরের রাজ দরবারের উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা করা হয়। তখন মিসরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আল-আদিত। আল-আদিত এর মৃত্যুর পর ১১৬৯ সালের ২৩শে মার্চ সব জুলুম অত্যাচার থেকে মুসলিম জাতিকে হেফাজতের জন্য আর ক্রুসেডারদের হাত থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য তাকে মিশরের গভর্নর ও সেনা প্রধান করা হয়।

সুলতান গাজী সালাউদ্দীন আল আইয়ুবী। ঝড়গতি সম্পন্ন, আপোষহীন অকুতোভয় আইয়ুবী যখন ইসলামের তরবারি হাতে আবির্ভূত হন তখন ক্রুসেডের সাজানো কৌশল বারেবারে কেপে উঠে। চক্রান্তের জাল ছিড়ে জেরুজালেম ছিনিয়ে এনে শত বছরপর আবার মুসলমানদের হৃদয়ে প্রশান্তি নিয়ে আসেন গাজী সালাউদ্দীন আইয়ুবী। ১১৯৩ সালের ৪ মার্চ সালাহউদ্দিন দামেস্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে এক টুকরো স্বর্ণ ও চল্লিশ টুকরো রূপা ছিল। তিনি তার অধিকাংশ গরিব প্রজাদের দান করে যান।দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের বাইরে তাকে দাফন করা হয়।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!