দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: লালকেল্লার মাথায় চড়ে শিখদের ধর্মীয় পতাকা নিশান সাহিব তুলেছেন কৃষকরা। জাতীয় পতাকার পাশেই স্থাপন করেছেন নিজেদের আন্দোলনের নিশান। সেই নিয়েই বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দিয়ে একদল দাবি করেছেন, কৃষকরা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন।
গোটা বিষয়টিতে কৃষক সংগঠনের নেতারাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা আঙুল তুলেছেন দীপ সিধুর দিকে। অভিযোগ, একদা মোদি–ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতাই কৃষকদের উসকে দিয়েছেন। হিংসা ছড়িয়েছেন। প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব রাখছিলেন কৃষকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৬ তারিখ ‘বেনো জল’ হয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গেছেন। তিনিই লালকেল্লায় নিশান সাহিব তুলেছেন।
কে এই দীপ সিধু? তিনি একজন পাঞ্জাবি অভিনেতা। ২০১৯ সালে গুরদাসপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচন জেতেন সানি দেওল। তার নেপথ্যে রয়েছেন এই দীপ। বিজেপি ঘনিষ্ঠ দীপই সানিকে জিতিয়েছিলেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাশে দীপের একটি ছবিও ভাইরাল। গত ডিসেম্বরে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন দীপ সিধু। খবর প্রকাশ্যে আসতেই সানি দেওল বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, দীপের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। তিনি কৃষক আন্দোলনে সমর্থন করেন না। ২৬ জানুয়ারির ঘটনার পরেও ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে ঘটনার সমালোচনা করেন সানি। তার পর ফের লেখেন, দীপের সঙ্গে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও যোগ নেই।
দীপ সিধু যদিও কোনও পক্ষের অভিযোগই মানতে চাননি। তিনি বারবার দাবি করেছেন, কৃষকদের পক্ষেই রয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে বলেন, জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়নি লালকেল্লায়। ‘নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে আমরা নিশান সাহিব এবং কৃষকদের পতকা তুলেছি। কিসান মজদুর একতার স্লোগানও দিয়েছি।’
সিধু এও দাবি করেন, কৃষকদের ওই ক্ষোভ খুব স্বাভাবিক। কারণ ‘মানুষকে সাধারণ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আজ সেই ক্ষোভই বেরিয়ে এসেছে।’ তাঁরা কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেননি বলেও দাবি করেন দীপ।
কিন্তু কৃষক নেতারা তাঁর পাশে থাকতে বা সমর্থন জানাতে নারাজ। ৪১টি কৃষক সংগঠনের ছাতা সংযুক্ত কৃষক মোর্চা স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘সমাজবিরোধীরা কবজা করেছে আন্দোলন’। ভারত কিসান ইউনিয়নের নেতা রাজেশ টিকাইত স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘দীপ সিধু শিখ নন। তিনি বিজেপি–র কর্মী। এটা কৃষকদের আন্দোলন। তাঁদেরই থাকবে। কিছু জনকে শিগগিরই এই আন্দোলনস্থল ছাড়তে হবে। যাঁরা ব্যারিকেড ভেঙেছেন, তাঁরা আন্দোলনের অংশ নন।’
কিসান মজদুর সংঘর্ষ পার্টির নেতা সতনাম সিং পান্নুও দায় চাপিয়েছেন দীপ সিধুর ওপর। তাঁর খোঁচা, ‘পুলিশ ওঁকে লালকেল্লায় আটকাল না কেন? শাসক দল বিজেপি–র সদস্য বলে?’
স্বরাজ অভিযান দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘প্রথম থেকে আন্দোলনকারীরা দীপ সিধুর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। শাম্বু সীমানায় যখন তিনি প্রথম বার আন্দোলনে যোগ দিতে আসেন, তখন তাঁর দলবদলের কাজকর্ম দেখে প্রতিবাদরত কৃষকরা সরে এসেছিলেন।’