Friday, November 22, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

গভীর ষড়যন্ত্র! দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে নাম শুধু সিএএ বিরোধীদের

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: গভীর ষড়যন্ত্র! দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে নাম শুধু সিএএ বিরোধীদের। দিল্লি দাঙ্গার তদন্তে প্রথম চার্জশিটে ১৫ জনের নাম অভিযুক্ত হিসাবে পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ। তার প্রায় সকলেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদকারী। সিএএ এবং এনআরসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেই ‘দাঙ্গার ষড়যন্ত্র’ বলে চিহ্নিত করে এই চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। লক্ষণীয়ভাবে দুই প্রতিবাদকারী ছাত্রী ছাড়া অভিযুক্তদের সকলেই মুসলিম।

ফেব্রুয়ারি মাসের দাঙ্গার পরে তদন্তের প্রত্যেক ধাপেই যেভাবে আক্রান্ত, সংখ্যালঘু এবং প্রতিবাদী ছাত্র – ছাত্রীদের একতরফা হেনস্থা করা হচ্ছিল, চার্জশিটেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। দু’টি স্টিলের ট্রাঙ্ক ভর্তি করে ১৭,৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে কারকারদুমা আদালতে। তার মধ্যে ২৬০০ পাতা অভিযোগের বয়ান। বাকি হাজার হাজার পৃষ্ঠা পরিশিষ্ট হিসাবে সংযোজিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেআইনি কার্যকলাপ মোকাবিলা আইন বা ইউএপিএ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে নাতাশা নারওয়াল , দেবাঙ্গনা কলিতা। ইশরাত জাহান, মিরান হায়দার , গুলিশান, সাফুরা জারগার, সাফাউর রেহমান, আসিফ ইকবাল তানহা, শাবাদ আহমেদ, তসলিম আহমেদ, সেলিম মালিক, মহম্মদ সেলিম খান, আতহার খান, মহম্মদ ইলিয়াসের, আপ কাউন্সিলর তাহির হুসেইনের নামও রয়েছে। প্রথম চার্জশিটে জেএনইউ’র প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদ ও জামিয়া মিলিয়া সার্জিল ইমামের নাম না থাকলেও পুলিশ সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছে , অতিরিক্ত চার্জশিটে তাদের নাম থাকবে। অতিরিক্ত চার্জশিটে আরও অনেকেরই নাম থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২১জন ধৃত ব্যক্তিরই নাম থাকবে তালিকায়। সঙ্গে নতুন জেরার ভিত্তিতে নাম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের বয়ানের নামে সীতারাম ইয়েচুরি, জয়তী ঘোষ, যোগেন্দ্র যাদবদের নাম ঢুকিয়ে রেখেছে পুলিশ। তাদের সমন পাঠানোর রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে। পুলিশ আদালতে জানিয়েছে, সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ প্রথম থেকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল না। হিংসার প্ররোচনা দিতেই এই বিক্ষোভ করা হয়েছিল। রাস্তা অবরোধ করা হয়েছিল সেই লক্ষ্যেই। ষড়যন্ত্রকারীরা দাঙ্গার পরিকল্পনা করেছে, তাদের পদাতিক বাহিনী হিসাবে কাজ করেছে ছাত্র – ছাত্রী ও অন্যান্যরা। প্রতিবাদে যোগ দিতে ছাত্ররা ২০ কিলোমিটার হেঁটেছে। এই অভিযোগ তুলেও তাকে দাঙ্গার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে পুলিশ। শাহিনবাগ, জাফরাবাদের প্রতিবাদী অবস্থানকে দাঙ্গারই প্রস্তুতি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যদিও শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশজুড়েই অজস্র জায়গায় এমন অবস্থান ও বিক্ষোভ হয়েছে‌। সেই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলেছে। বরং বিক্ষোভ চলাকালীন শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হিন্দুত্ববাদীরা গুলি চালিয়েছে। সেই ঘটনা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে‌।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের অতি কুখ্যাত ‘গুলি মারো’, কপিল মিশ্রের সরাসরি হিংসার হুমকিকেও অপরাধের পরিধির মধ্যে আনেনি পুলিশ। বরং পুলিশের শীর্ষ অফিসাররা খোলাখুলি তাদের হয়ে সওয়াল করছেন। এর মধ্যেই ৯ জন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তবকে একটি খোলা চিঠি দিয়ে বলেছেন, দিল্লি দাঙ্গার তদন্তগুলি ক্রটিপূর্ণ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রাক্তন ডিজি শফি আলম, সিবিআই’র প্রাক্তন বিশেষ ডিরেক্টর কে সেলিম আলি, পাঞ্জাবের প্রাক্তন ডিআইজি মহিন্দরপাল অউলাখ, কাশ্মীর এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রাক্তন ওএসডি এএস দৌলত , উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন ডিজি অলোক বি লাল, মন্ত্রীসভার সচিবালয়ের প্রাক্তন বিশেষ সচিব অমিতাভ মাথুর, সিকিমের প্রাক্তন ডিজিপি অবিনাশ মোহনানে, গুজরাট পুলিশের প্রাক্তন ডিজি পিজিজে নামপুথিরি, এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রাক্তন ডিজি একে সামন্ত ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

প্রাক্তন আইপিএস অফিসার জুলিও রিবেইরোর বক্তব্যও তারা উল্লেখ করেছেন। প্রাক্তন পুলিশ কর্তারা দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে ফের পক্ষপাতহীন ভাবে তদন্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। রিবেইরো পুলিশ পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে তদন্তের বিকৃত গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার উত্তরে কমিশনার তাকে একটি ই – মেল পাঠিয়েছেন। রিবেইরো সেই ই – মেলের সারাংশ তুলে ধরে বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে কীভাবে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। গান্ধিবাদীদের এমনকি আমাকেও দেশপ্রেমিক মনে করেন না বলে কমিশনার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। এই রাজত্বে এমনই হবার কথা।

দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের তদন্ত বিজেপির নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। তদন্তের নামে দাঙ্গায় আক্রান্তদেরই থানায় ঢেকে এনে জোর করে বয়ান লেখানো হয়েছে, অত্যাচারও করা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত দেবাঙ্গনা কলিতার বিরুদ্ধে একটি মামলায় সদ্যই দিল্লির আদালত বলেছে, পুলিশ এই প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেনি যে, উনি উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন। বিচারপতি বলেন, পুলিশের দেওয়া পেন ড্রাইভে দেখা যাচ্ছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে দেবাঙ্গনা কলিতা উপস্থিত ছিলেন। যা ভারতের সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারায় মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া আছে। একইভাবে অবস্থান, ধরনা, সড়ক অবরোধ , চাক্কা জ্যাম ইত্যাদি যা নিতান্তই আন্দোলনের অহিংসা ধারা হিসাবে বহুকাল ধরেই পরিচিত , সেগুলিকে এখন শুধু ফৌজদারি অপরাধি নয় , উগ্ৰপন্থা দমনে ব্যবহৃত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ২৭ বছরের গবেষক সন্তানসম্ভবা সাফুরা জারগারকেও শুধু প্রতিবাদে অংশ নেওয়ায় দাঙ্গায় জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!