দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: নেই কোনো পাকা বাড়ি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার থেকেও দেওয়া হয়নি কোনো বাড়ি। তেঁতুলপাতায় গাদাগাদি করে ঝুপড়ির মধ্যে ৭০-৮০ বর্গফুটের একচিলতে ভাড়ার ঘর। তবুও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বছর পঞ্চাশের লক্ষ্মীদেবীর ছবি দেখিয়ে দেদার প্রচার বিজেপির! দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশে হঠাৎ তাঁর ছবি দেখে চমকে গিয়েছেন লক্ষ্মীদেবী। শুধু তাই নয়, হঠাৎ জানলেন, ওই ছবিতে তাঁর পিছনে থাকা পাকা বাড়িটাও নাকি তাঁর! হঠাৎ শুনলেন, মোদী সরকারের প্রকল্পে ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠেছেন তিনি!
অথচ বাস্তব বলছে, বস্তির একচিলতে ওই ঘরে মা লক্ষ্মী চঞ্চলা হলেও লক্ষ্মীদেবী বহু বছর ধরেই আত্মনির্ভর। স্বামীর মৃত্যুর পর ঠিকে শ্রমিকের কাজ করে তিন ছেলেকে একা হাতে মানুষ করেছেন। অথচ এত লড়াইয়ের পরেও একটা বলার মতো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। রাতে ঘরে কেবল মেয়েরা থাকেন। ছেলেরা খোলা আকাশের নীচে কেউ ফুটপাথে, কেউ ভ্যানের উপর মশারি টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে তাদের সাফল্যের অন্যতম ‘মুখ’ লক্ষ্মীই! দরিদ্র পরিবারের দাবি, এর পর থেকেই চরম তামাশা চলছে তাঁদের নিয়ে। তাই বিজ্ঞাপনের ‘মিথ্যে’ ছবিকে এবার ‘সত্যি’ করুক নরেন্দ্র মোদীর সরকারই।
লক্ষ্মীদেবী ও তাঁর পরিবারের দাবি, এই প্রৌঢ়ার ছবি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়ে আত্মনির্ভর হয়েছেন। গত ১৪ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছবি ব্যবহার করে আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে। যেখানে এক দিকে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীদেবী, পিছনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পাওয়া বাড়ি, পাশেই হাসিমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কিন্তু লক্ষ্মীদেবীর বক্তব্য, ‘পুরো মিথ্যে কথা। আমার ছবি ব্যবহার করে একটা ভুল প্রচার করা হচ্ছে।’ ছবিটি আদৌ লক্ষ্মীদেবীর কি না, তা নিয়ে সরকারি আধিকারিকরা নিশ্চিত নন। তবে লক্ষ্মীদেবীর দাবি, মাস কয়েক আগে গঙ্গাসাগরের মেলায় তিনি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছিলেন। সে সময় একদল ফটোগ্রাফার তাঁর ছবি তোলেন। পরে তিনি দেখেন, সেই ছবি ব্যবহার করে একাধিকবার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকী কলকাতায় হোর্ডিং-ফ্লেক্সও পড়েছে।