দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে বিতর্কিত তিনটি কৃষি বিল। সেই কৃষি বিলের প্রতিবাদে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে কৃষক বিক্ষোভ। ওই কৃষি বিলে স্বাক্ষর না করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। পাঞ্জাব, কর্নাটক, বিহার, মহারাষ্ট্র, এমনকি বিজেপি শাসিত হরিয়ানাও বিক্ষোভে উত্তাল। কোথাও ভারত বনধ, রেল রোকো, জাতীয় সড়ক অবরোধ কোথাওবা চাক্কা জ্যাম।
শুধু তাই নয়, একদিনের বনধে অংশ না নিলেও এই কৃষি বিলে পরিবর্তনের জন্য সওয়াল করেছে ভারতীয় কিষাণ সংঘ, ও স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের মতো আরএসএস ঘনিষ্ঠ কৃষক সংগঠন। শুক্রবার পাঞ্জাবের ৩১ টি কৃষক সংগঠন ‛ভারত বনধ’ ডাক দিয়েছিল। এই বনধকে সমর্থন করেছে শাসক কংগ্ৰেস ও বিরোধী আপ দুই দলই। নয়া কৃষি বিল নিয়ে হরিয়ানার ‛ভারতীয় কৃষাণ ইউনিয়ন’ জানিয়েছে, তারা কোনো কোনো সংগঠনের দেশ ব্যাপী বনধের প্রস্তাবকেও সমর্থন করছেন। এক বিবৃতিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং জানান, তার সরকার কৃষকের পাশে রয়েছে। সেই কারণে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কোনো অভিযোগ নথিভুক্ত করা হবে না।
এদিকে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে কংগ্ৰেসও। বৃহস্পতিবারই এই বনধকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। শুক্রবার সকালেই কৃষি বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বনধকে সমর্থন করে রাহুল গান্ধী লেখেন, ‛ক্রটিপূর্ণ জিএসটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন কৃষি আইন আমাদের কৃষকদের ক্রীতদাস বানাবে।’ একই সুর প্রিয়াঙ্কার ট্যুইটেও। তিনি লেখেন, ‛কৃষকদের থেকে নূন্যতম সহায়ক মূল্য কেড়ে নেওয়া হবে। কোটি কোটি কৃষকদের ক্রীতদাসে পরিণত হতে বাধ্য করা হবে। না পাবে দাম না পাবে সন্মান। নিজের জমিতেই শ্রমিকে পরিণত হবে কৃষকরা।’ বিজেপির আনা কৃষি বিল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয় বলেও এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন প্রিয়াঙ্কা।
এদিকে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে ২ কোটি স্বাক্ষর সংগ্ৰহের অভিযান শুরু করেছে তারা। যুব কংগ্ৰেস দেশের নানা স্থানে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্ৰেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি মোদী সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিলের ব্যপারে সকলকে ভুল বুঝিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই বিলের ফলে দেশের কৃষক শ্রেণি কর্পোরেট দাসত্বের শিকার হবে। প্রসঙ্গত, কৃষি বিল পাশের সময় ৮ বিরোধী সাংসদদের বিরুদ্ধে উচ্চকক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু তাদের সাসপেন্ড ও করেন। এরপরই কেবল রাজ্য সভা নয়, কৃষি বিল নিয়ে এরপর সারা দেশেই কৃষকরা শুরু করেন প্রতিবাদ আন্দোলন। যে প্রতিবাদের ঢেউ এসে পৌঁছেছে এরাজ্যেও।
রাজ্যেও বিভিন্ন কৃষক সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। বর্ধমান, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যে বিভিন্ন জেলায় কৃষি বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেন বাম-কংগ্ৰেস নেতা-কর্মীরা। রাজ্যসভায় নয়া কৃষি বিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস, বাম, কংগ্ৰেস সহ বিরোধী দলের সাংসদরা। রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে শুরু হয়েছে পথ অবরোধ। শুক্রবার থেকে মেয়ো রোডে ধর্নায় বসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে বনধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অমৃতসর, জলন্ধর, লুধিয়ানা, অম্বালা, চণ্ডীগড় সহ সেখানকার বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করেন বিভিন্ন কৃষক সংগঠনগুলি। জলন্ধরের কাছে সকাল থেকেই অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে ভারতীয় কৃষাণ ইউনিয়ন ও রেভোলিশনারি মার্কসিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। অম্বালাতে বিক্ষোভের জেরে বন্ধ থাকে দিল্লি-চণ্ডীগড় বাস পরিষেবা। লুধিয়ানার ছবিটাও প্রায় একই। কৃষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই পাঞ্জাব জুড়েই চালাচ্ছে ‛রেল রোকো’ অভিযান। শুক্রবারও তা অব্যাহত থাকে। ফিরোজপুর ডিভিশনে বাতিল হয় ১৩টি ট্রেন।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা ছাড়াও কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহারেও চলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। কর্ণাটকে কৃষি বলি ২০২০-র প্রতিবাদে নামে ওই রাজ্য কৃষক সংগঠনও। বোম্মানহালিতে কর্ণাটক-তামিলনাড়ু জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান সে রাজ্যের কৃষকরা। মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভে নেমেছে বাম সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কৃষাণ সভা। সে রাজ্যের প্রায় ২১টি জেলাতে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কিষাণ সভার ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গাতেও পথে নেমেছেন কৃষকরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় চিল্লাতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বারাবাঁকিতে অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়ে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডাতেও চলে কৃষক বিক্ষোভ। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন রাস্তা অবরোধ করে এই বিলের প্রতিবাদ করছে। যার জেরে যান চলাচলকে দিক পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান ডিসিপি নয়ডা। কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিহারের রাস্তায় নামেন লালুর-দুই পুত্রও। কৃষকদের নিয়ে পাটনার রাস্তায় রেলিও করেছেন তাঁরা। সেই পদযাত্রায় রাষ্ট্রীয় জননতা দলে অর্থাৎ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে দেখা গিয়েছে ট্রাক্টর চালাতে। তখন তার দাদা তেজপ্রতাপ যাদব ছিলেন ট্রাক্টরের মাথায়। এই বিলকে কৃষক বিরোধী আখ্যা দিয়ে তেজস্বী বলেছেন, ‛সরকার আমাদের অন্ন দাতাদের পুতুল বানানোর চেষ্টা করছে। ২০২২ – এর মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু এই বিল তাদের আরও গরিব করবে।’