আজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ১০১ বছর পূর্ণ হল। ঠিক ১০১ বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৮ সালে আজকের দিনেই আর্মিস্টিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে চার বছরের বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়েও কেন বলতে হবে – যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে কলম ধরেছেন – সামাউল্লাহ মল্লিক।
১৯১৪ সালের এক প্রখর গ্রীষ্মে বেজে উঠেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা৷ রক্ত ঝরানোর খেলায় জড়িয়ে পড়েছিল অসংখ্য দেশ৷ এরপর একটানা চার বছর ঘটে যায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ৷ প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ আজ থেকে ঠিক ১০১ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর আর্মিস্টিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে চার বছরের বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। ফ্রান্সের কমপিয়ানিয়া জঙ্গলে একটি রেলের বগিতে ভোর ৫টায় চুক্তি সই করেছিল মিত্র বাহিনী এবং জার্মান বাহিনী। বেলা ১১টার মধ্যেই ইউরোপে বন্ধ হয়েছিল গোলাবারুদের মারণখেলা। বিশ্বের ৩০টির বেশি রাষ্ট্র সে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল আর লক্ষ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক মানুষ তাতে প্রাণ দিয়েছিলেন। যাক গে, এই বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা নিয়ে লিখতে বসলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে তবু আলোচনা ফুরাবে না। আজ বরং কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক।
এটা ২০১৯ সাল। চোখটা বন্ধ করে একবার ভাবুন তো, বর্তমান বিশ্ব কেমন আছে? অনেক কঠিন কাজ হয়ে গেল? আচ্ছা পরিধি কমিয়ে শুধু এশিয়া উপমহাদেশ নিয়ে ভাবুন। ছাড়ুন, আরও পরিধি কমিয়ে শুধু ভারতবর্ষ নিয়েই ভাবুন। কেমন আছে আপনার প্রিয় দেশ? উত্তরটা আপনি নিজেই দিতে পারবেন। আজ যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ১০১ বছর পূর্ণ হচ্ছে, তখনও ভারত তথা বিশ্বজুড়ে নতুন করে তৈরি হচ্ছে এক যুদ্ধংদেহী ভাব। এই যুদ্ধ পারমানবিক বোমা ফেলে নয়, বরং হিংসার বাতাবরণ তৈরি করে শুরু করার চেষ্টা চলছে। মূলত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যেই এই কাজ আঞ্জাম দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একশ্রেণীর সাম্প্রদায়িক শক্তি। যারা শুধু ভারতেই না, নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বময়। এই যুদ্ধে নাকাল হয়ে মুক্তির পথ খুঁজছে মানুষ। সেখান থেকেই আওয়াজ উঠছে – যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!
প্রাচীন কাল থেকেই সম্পদ এবং শ্রম লুন্ঠন চলে আসছে। এই লুন্ঠনের জন্যেই যুদ্ধ। আজকে বিশ্বজুড়ে লুন্ঠনের পদ্ধতি পাল্টেছে, তাই যুদ্ধ পদ্ধতিও পাল্টে গিয়েছে। বিশ্বায়নী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লুন্ঠন প্রক্রিয়াকে সর্বজনীন চরিত্র দিয়েছে। যুদ্ধ ব্যতিরেকেও আজকের সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাকে লুন্ঠনের নয়া উদারবাদী চেহারা দিয়েছে। দুটো বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখেছি এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধগুলোতে ক্রমাগত সাধারন নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের ক্রমবর্ধমান ধ্বংস, সার্বিক লুন্ঠন ও মৃত্যু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখেছি শতকরা পাঁচভাগ মানুষ মারা গিয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় বিশযুদ্ধে সেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ালো শতকরা ছেষট্টি ভাগ। আজকের দিনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প স্প্রে করে মানুষ মারার কাজ করা হচ্ছে। মরছে সেই মানুষই, শুধু পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়েছে। স্বার্থ কিন্তু একই আছে, আর তা হল লুন্ঠন।
ভারতবর্ষে সত্তর বছরের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা আজকে বিপন্ন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নামে আমেরিকা বিভিন্ন দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে, গণতন্ত্র রক্ষার নামে ধ্বংস করেছে দেশগুলোকে, সেই আমেরিকা ভারতের গণতন্ত্রের বিপন্নতা নিয়ে কোনো কথা তো বলছেই না, পরন্তু দেশের গণতন্ত্র বিপন্নকারী শাসকগোষ্টীদের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্কে গড়ে তুলছে। এই বন্ধুত্ব ভারতীয় জনগণের অধিকার হরণে মদত দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। নাহলে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কেন আজও পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা ঘটবে? কেন কে কি খাবে, কে কি করবে তার উপর কথা বলা হবে? এ যুদ্ধ হিংসার যুদ্ধ, যা থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। সুতরাং আজকে ভারত তথা বিশ্ব জুড়ে যে আন্দোলন জনমনে সর্বাগ্রে জাগরিত করা দরকার, তা হচ্ছে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। আগামী প্রজন্মের জন্যে এই পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে চাই শান্তি। বেঁচে থাকার জন্যে শান্তি। তাই শান্তির দরজা খুলে রাখার জন্যে বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন হোক।
সব খবর পড়তে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন – এখানে ক্লিক করুন