দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : টিজার-ট্রেলারে উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছিলেন, আর এবার সিনেমায় আরও দুর্ধর্ষ অবতারে ধরা দিলেন কিং খান। ‘জওয়ান’ ছবিতে ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করা’ বিক্রম রাঠোর ওরফে শাহরুখ যেন আদ্যোপান্ত ‘রবিনহুড’। কখনও দেশের কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান উল্লেখ করে নির্বিকার আমজনতাকে নাড়িয়ে দিয়েছেন, আবার কখনও বা গল্পের মোচড়ে আশির দশকের আগ্নেয়াস্ত্র কেলেঙ্কারির ঘটনাও মনে করিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের হতদরিদ্র দশার ঝলকও তুলে ধরল ‘জওয়ান’। সর্বপরি, আমজনতাকে আঙুলের সদ্ব্যবহার নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ দিল ‘জওয়ান’। চলতি ভাষায়, কাঠি না করে, শাহরুখের সংলাপের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের মসনদে উপযুক্ত সরকার নির্বাচনের উপদেশ দিলেন পরিচালক অ্যাটলি। ‘স্বদেশ’ ছবির পর বহুদিন বাদে পর্দায় ‘জওয়ান’-এর হাত ধরে দেশপ্রেমের গাঁথা বুনে দিলেন শাহরুখ। হ্যাঁ, যিনি ‘স্বদেশ’-এর মোহন ভার্গব, ‘চক দে ইন্ডিয়া’র কবীর খান, তিনিই ‘জওয়ান’-এর বিক্রম রাঠোর-আজাদ।
২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে দর্শকরা যেমন হাসলেন, তেমন কাঁদলেনও। রোম্যান্স, অ্যাকশন, নাচ-গান… মশালা মুভির পুরোদস্তুর উপকরণ মজুত রয়েছে ‘জওয়ান’-এ। এবার শাহরুখকে দেখা গেল দ্বৈত ভূমিকায়। এই ছবির পরতে পরতে রহস্য-রোমাঞ্চ। প্রেক্ষাগৃহে ঘাড় ঘোরানোর সুযোগ নাও পেতে পারেন দর্শকরা। ‘পাঠান’-এর থেকেও উন্নতমানের প্লট। প্রমিলা বাহিনী নিয়েই জয় করে দেখালেন ‘আজাদ’ শাহরুখ খান। নড়বড়ে সিস্টেমের ফাঁদে পড়ে শৈশব, কৈশোর, ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া মহিলাদের নিয়েই টিম তৈরি করে সরকারকে ভড়কে দিলেন তিনি। সিনেমার দুই অভিনেত্রীর কথা উল্লেখ না করলেই নয়! ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর স্মৃতি উসকে দিল শাহরুখ-দীপিকা পাড়ুকোন জুটি। মহিলা পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় দক্ষিণী সুপারস্টার নয়নতারাও তুখড়। কিং খানের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়েছেন অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলিতে। তার অবশ্য আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে এই গল্পে, সেটা সারপ্রাইজই থাক বরং! তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, খলনায়ক ‘কালি’র ভূমিকায় বিজয় সেতুপতির অভিনয়। ঠান্ডা মাথায়, শিরদাড়ায় হিমস্রোত বইয়ে দেবে তাঁর সংলাপ ও উপস্থিতি। কিছু দৃশ্যের লাইমলাইট পুরো কেড়ে নিয়েছেন দক্ষিণী অভিনেতা। অ্যাটলির আরেক ‘সারপ্রাইজ’ সঞ্জয় দত্ত।
তবে এটুকু বলা যায়, গোটা ছবি জুড়ে শাহরুখের বিভিন্ন শেড দেখতে পাবেন। সে কখনও জেলার, কখনও জওয়ান, কখনও সাধারণ মানুষ আবার কখনও…। এক কথায় বলতে গেলে পাঠানের থেকেও জওয়ান ছবিতে বেশি নজর কেড়েছেন শাহরুখ। রুদ্ধশ্বাস পৌনে তিন ঘণ্টা। এই পৌনে তিন ঘণ্টায় পর্দা থেকে এতটুকু চোখ ফেরানো যায়নি। মাঝের পনের মিনিটের ব্রেক অসহ্য মনে হয়েছে। এতটাই টানটান স্ক্রিপ্ট। এমনই গল্পের বাঁধুনি। আর চমক? ওরে বাবা! এটার জন্য বোধহয় ছবিটা অন্তত দুবার দেখা যায়। এই ছবির অন্যতম ইউএসপি এর মেকআপ এবং মারকাটারি অ্যাকশন দৃশ্য। অ্যাকশন, মেকআপ বা স্ক্রিপ্টের মতো দুর্দান্ত হল সিনেমাটোগ্রাফি। প্রতিটা দৃশ্য এত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। প্রথমদিকে গোটা গায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে মারপিট হোক বা জওয়ান রূপে শাহরুখের অ্যাকশন দৃশ্য কিংবা চেজিং সিকোয়েন্স, সবটা মিলিয়ে একটা পাওয়ার প্যাক প্যাকেজ এই ছবি। অনেকেই ভেবেছিলেন এই ছবির গান হয়তো আপ টু দ্য মার্ক নয়। হয়তো খানিকটা সত্যি, কিন্তু গোটা ছবির সঙ্গে গানগুলো কিন্তু খাপে খাপে মিলে গেছে। জোর করে ঢোকানো হয়েছে বা এমন কিছু কিন্তু বিন্দুমাত্র মনে হয়নি। রোম্যান্টিক বাদশা এখানে ‘পাঠান’-এর থেকেও তুখড় অ্যাকশন অবতারে ধরা দিয়েছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব জওয়ান কামাল করে দেখালেন। এই ছবি কিন্তু ভরপুর ‘পয়সা ওয়াসুল’। অ্যাটলির মাস্টারপিস। রহস্য, রোমাঞ্চ, রক্তারক্তি, সন্ত্রাস, নুইয়ে পড়া সিস্টেম, রোম্যান্সের নিখাদ মুখরোচক গল্প উপভোগ করতে প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারুন জলদি।