দৈনিকসমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : কখনও তিনি সাংবাদিকদের ‛শকুন’ বলছেন। আবার কখনও বলছেন ‛দেশে এখন হাইকোর্টগুলি সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে।’ ভদ্রলোকের নাম তুষার মেহতা, মোদী সরকারের প্রধান কৌঁসুলি। আদালতে মোদী সরকারের হয়ে বক্তব্য তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে তাঁর আক্রমণের নিশানা হচ্ছে দেশের বিচারব্যবস্থাও। মোদী সরকার ও তাঁর সলিসিটার জেনারেলের এমন মন্তব্যে বিভিন্ন মহল থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গেই সিপিআম(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এক সুস্থ পরিবেশে আইনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিয়ে বিতর্ক চালানোর এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করছে সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু এখন আমরা দেখছি বিচারপতিদের সামনেই মোদী সরকারের শীর্ষ আইনি আধিকারিক কুরুচিকর কটাক্ষ করছেন ও গুজব ব্যবহার করে সওয়াল করছেন।
ইয়েচুরির কথায়, ‛বিচারব্যবস্থার মর্যাদা ও সুনাম এখন বিচারপতিদের হাতেই।’ তিনি বলেছেন, সরকার তো বেপরোয়াভাবে এমন একটা লোককে বেছেছে যার কোনও অনুতাপ নেই। সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতার এই মন্তব্য কি আদালতগুলিকে চোখ রাঙানো নয়? তুষার মেহতার মন্তব্য নিয়ে রবিবার এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কংগ্রেস।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল একইসঙ্গে বলেছেন, ‛আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি এর মানে কি আদালতকে শাসানো নয়। এমন উদ্ধত আচরণ কোনও ফ্যাশন বনে যাওয়া উচিত নয়।’ সিব্বল বলেছেন, ‛এই সরকার অতীতেও এমন ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। আদালত ও সরকার উভয়েরই বিষয়টা নজর করা দরকার। আদালত যতক্ষণ না জাগবে ততক্ষন এই আক্রমণ চলবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে মত প্রকাশের আবহ তৈরি হবে না।’
সিব্বল আরও বলেছেন, সরকার একজন সাংবাদিককে শকুন (ভালচার) বলছে। আমার মনে হয় সরকার তার কালচার ভুলে গেছে। আমরা এর নিন্দা করছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে মামলার দিন তিনেক আগে সলিসিটার জেনারেল সুদান দুর্ভিক্ষে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী কেবিন কার্টারের বিখ্যাত ছবির উপমা তুলে ধরে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। মোদীর সমর্থকদের ছড়িয়ে দেওয়া এক হোয়াটসঅ্যাপ পোস্ট আদালতে তুলে ধরে সরকারি কৌঁসুলি চেষ্টা করেন যাতে সরকারের সমালোচনা বন্ধ হয়।
ভুল সাল উল্লেখ করেই সরকারি আইনজীবী আদালতে গুজবের ভরসায় নেমেছিলেন সাংবাদিকদের আক্রমণ করতে। তাঁর ব্ক্তব্য, কোথায় পরিযায়ী শ্রমিক মারা যাচ্ছে, তার জন্য ওঁত পেতে থাকছেন সাংবাদিকরা। সিব্বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, রুচি ভুলেছে কেন্দ্রের সরকার। সাংবাদিকরা পেশাগতভাবেই কলুষিত পরিবেশকে পরিষ্কার করতে দায়বদ্ধ থাকেন। সিব্বল আরও বলেছেন, ‛মানুষের সাথে সরকারের সামাজিক দুরত্ব এতই বেড়ে গেছে যে ওরা জানেই না বাস্তবে কী ঘটছে এবং মানুষ যে সমস্যার মুখোমুখি তার কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’