মিজানুর রহমান, দৈনিক সমাচার, ধুলিয়ান: শুধু মহামারী সময়ে নয়, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে রক্তদান করে চলেছেন মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ থানার জয়কৃষ্ণপুর গ্ৰামের উঠতি যুবক মেসবাউল ইসলাম ও মাসুদ রানারা। জানা গেছে, তাঁরা সকলেই ছাত্র। কিন্তু এতো অল্প বয়সেও তাঁরা এই মহৎ কাজ করে চলেছেন।
আরও জানা গেছে, ‛মানব বন্ধন’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মেসবাউলরা। যাদের কাজই হল বিভিন্ন সামাজিক কাজের পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়ানো এবং রক্তদান করা। গত কাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ‛মানব বন্ধন’ সংস্থার সদস্য মেসবাউল ইসলামের কাছে খবর আসে যে প্রায় ৪ জন মুমূর্ষু রোগীর ইমারজেন্সি রক্তের প্রয়োজন। যাদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ারও রোগী ছিলেন। যেমনই খবর পাওয়া তেমনি কাজ, নিজেদের বন্ধু ও সংস্থার আরও অন্য সদস্যদের নিয়ে প্রায় ৩০-৩৫ কিমি দূরে জঙ্গীপুরের বসুমতি হাসপাতাল ও জঙ্গীপুর মহকুমা হাসপাতালে বাইক চালিয়ে গিয়ে তিনি রক্তদান করে আসেন।
মেসবাউলের সঙ্গে ছিলেন মাসুদ রানা। তিনি সামসুন নাহার খাতুন নামের এক অপারেশন রোগীকে রক্তদান করেন। আরও একজন রক্তদাতা আতাউর রহমান। তিনি ৪ বছরের এক থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্তদান করেন। অপর একজন রক্তদাতা তৌসিক জামাল। তিনি জঙ্গিপুর মহকুমা হসপিটালে ভর্তি ফারাক্কার সুকন্তলা হালদার নামের এক ব্যক্তিকে রক্তদান করেন।
একে তো করোনা মহামারীর সময়। তার উপরে আবার লকডাউন। যার কারণে ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলোতেও রক্তের তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এমন শোচনীয় সময়ে রক্ত পেয়ে চির কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন রোগীর পরিবারেরা।
এবিষয়ে উদ্যোক্তা মেসবাউল ইসলাম দৈনিক সমাচারকে জানান, সুকন্তলা হালদার নামের ওই রোগীর পরিবার কোনো মতেই রক্তের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। শেষমেশ আমি জানতে পারি এবং রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়। এর পরেই রোগীর পরিবারের লোকজন বলেন, ভগবান আপনাদের কে দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাদের মঙ্গল করুন। আরেক থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিবার রক্তের ব্যবস্থা করতে না পেরে চরম চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় মেসবাউল খবর পান এবং মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই তার রক্তের ব্যবস্থা করে দেন। রক্তদান করে রক্তদাতারা প্রত্যেকেই খুশি বলে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে মেসবাউল ইসলাম আরও জানান, আমাদের রক্তের বিনিময়ে যদি কোনো মুমূর্ষু রোগী বেঁচে থাকে তবে আমাদের পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে আসা স্বার্থক। তিনি আরও বলেন, আমরা তেমন কিছুই করিনি, শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে মানুষের কর্তব্য পালন করেছি। প্রত্যেকেই এর আগেও ৬-৭ করে রক্ত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন রক্তদানের কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান মেসবাউল মাসুদ রানারা। তিনি রক্তদানে এগিয়ে আসার জন্য আরও সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের এই মহান উদ্যোগকে স্যালুট জানিয়েছেন রোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা।