দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: শুক্রবার দেশজুড়ে ঈদের আনন্দ উদযাপিত হয়। কিন্তু সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি সামসুদ্দিনেরা। ঈদের দিনেই বন্ধু চন্দনের বাবা মারা যাওয়ার খবরটা এল যখন, ওঁরা নিমেষে খুশির ঈদের উৎসব থামিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। করোনার ভয়ে নিজের গ্রামে কেউ সৎকারের কাজে হাত লাগাতে রাজি হননি। তাই পাশের গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারাই এগিয়ে এলেন। বন্ধুর বাবাকে কাঁধে নিয়ে অন্তিম যাত্রায় হাজির হওয়ার পাশাপাশি দাহর কাজে সহযোগিতা করে মানবিকতাকে আগে রাখলেন ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো। আতঙ্ক, বিদ্বেষের মতো শব্দগুলোকে হেলায় হারিয়ে দিয়ে শুক্রবার এমনই সম্প্রীতির সাক্ষী থাকল বাংলা।
শুক্রবার ঈদের নামাজ পড়ে পোলবা দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবনান গ্রামে উৎসব পালন করছিলেন মোমরেজ আলি, শেখ আবদুল হাকিম, আমির হোসেন, সামসুদ্দিন, গোলাম সুবানিরা। এরই মধ্যে হঠাৎ খবর আসে, পাশের গ্রামের ৭২ বছরের হরেন্দ্রনাথ সাধুখাঁ ভোরে মারা গিয়েছেন। গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। করোনা পরীক্ষা করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে হরেন্দ্রনাথের কোনও পাড়া-পড়শি মৃতের বাড়ির চৌকাঠে পা দেননি। একমাত্র ছেলে, পেশায় শিক্ষক চন্দন বাবার সৎকারের জন্য দিশেহারা হয়ে সাহায্য চেয়েছেন, কিন্তু তাতেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
বাবাকে হারানোর শোককেও যেন ম্লান করেছে তাঁর বন্ধুদের মানবিকতা। বলছিলেন, ‘প্রতিবেশীরা করোনার ভয়ে কেউ বাবার মৃতদেহের সৎকারে এগিয়ে আসেনি। কিন্তু আমার সংখ্যালঘু বন্ধুরা যে ভাবে এগিয়ে এলো, তাতে আমি অভিভূত। ওরা ঈদের আনন্দ ভুলে যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে পিতৃহারা হওয়ার যন্ত্রণায় যেন কিছুটা মলম পড়েছে।’ হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, শিক্ষক-নেতা মনোজ চক্রবর্তীও বলছিলেন, ‘গ্রামে-শহরে মানুষ মানুষের পাশেই থাকবে- এটাই আমরা চাই। আজকের দিনে ধর্মীয় হানাহানির ঊর্ধে উঠে গ্রামের ছেলেরা মানবতার নজির গড়েছে। এটাই তো আমাদের ভারতবর্ষ।’