দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : করোনা ভাইরাস যখন গোটা দেশের কাছে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে সেই সময়েই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি এবং দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি এক ভিডিও বার্তা দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। টানা লকডাউনের কারণে বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের তা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে রীতিমতো তোপ দাগেন তিনি।
সোনিয়ার সাফ কথা, ‛আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, করোনা মহামারি একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং লকডাউনের কারণে গত দু’মাস ধরে পুরো দেশ জীবিকা এবং কর্মসংস্থানের দিক থেকে একটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথমবার প্রত্যেকে অবাক হয়ে দেখলেন যে কীভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কোনও উপায় না খুঁজে পেয়ে খিদেতেষ্টাকে সঙ্গী করেই কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ খালি পায়েই পেরিয়ে ঘরে ফেরার জন্যে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁদের এই কষ্ট, এই দুর্দশা, দেশের প্রতিটি হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু সম্ভবত সরকারের কাছে তা পৌঁছায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‛লক্ষ লক্ষ চাকরি চলে গেছে, কয়েক কোটি ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে শেষ হয়ে গেছে। কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকের ফসল বিক্রি করতে গিয়ে দোরে দোরে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। পুরো দেশ এখন এই যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছে, কিন্তু সম্ভবত সরকার তা উপলব্ধি করতে পারেনি।’ ওই ভিডিও বার্তায় কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‛প্রথম দিন থেকেই আমরা সমস্ত কংগ্রেস সহকর্মী, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ বারবার সরকারকে বলেছে যে এটিই এখন সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। এই সময়েই দেশের শ্রমিক, কৃষক, শিল্প বা ছোট দোকানদারদের ক্ষতিতে পাশে থাকা উচিত সরকারের। কিন্তু কেন জানি না কেন্দ্রীয় সরকার এই জিনিসটা বোঝার বা বাস্তবে তা কাজে পরিণত করার কোনও চেষ্টাই করছে না।’
সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‛কংগ্রেসে আমার সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই বিষয়ে সামাজিক প্রচার বাড়িয়ে ভারতের মানুষের কণ্ঠের জোর বাড়াতে হবে। আমরা আবারও বলছি, কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিস্থিতিতে কোষাগারের তালা খুলে দরিদ্রদের জন্যে ত্রাণ সরবরাহ করুন। আগামী ৬ মাসের জন্য প্রতিটি পরিবারকে, সরাসরি মাসে ৭৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ সাহায্য করুক এবং অবিলম্বে সকলের হাতে অন্তত ১০ হাজার করে টাকা তুলে দিক।’ তিনি আরও বলেন, ‛শ্রমিকদের নিরাপদ ও নিখরচায় বাড়িতে পৌঁছে দিন এবং তাদের জন্য জীবিকা ও রেশনের ব্যবস্থা করুন। মহাত্মা গান্ধী মনরেগায় ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করুন, যা গ্ৰামেই কর্মসংস্থান পেতে সাহায্য করতে পারে। অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে আর্থিক সহায়তা দিন। যাতে কোটি কোটি মানুষের সহায়তা হয় এবং দেশও এগিয়ে যেতে পারে।’
নিজের ভিডিও বার্তায় একেবারে শেষে সোনিয়া বলেন, ‛এই পর্বে কংগ্রেস সমর্থন, কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আরও একবার সরকারের সামনে এই দাবিগুলি তুলে ধরলাম। সঙ্কটের এই মুহূর্তে, আমরা প্রত্যেকে দেশবাসীর সঙ্গে রয়েছি এবং একসঙ্গে আমরা অবশ্যই এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে জিতব। জয় হিন্দ!’