দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : কোভিড-১৯-এর প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে একশ্রেণির মানুষ ও মিডিয়া মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের বিদ্বিষ্ট সদস্যরাও একাজে সহযোগিতা করছে। আহমেদাবাদের শাহপুর একটি মুসলিম প্রধান এলাকা যেটি করোনা সংক্রমনের জন্য কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত। ৮ মে শাহপুর পুলিশ সেখানকার স্থানীয় মানুষদের হেনস্থা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। লকডাউন রক্ষা করতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে বারবার মুসলিমরাই কেন পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর পিছনে শুধু যে লকডাউন নেই, আছে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, তাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
পুলিশ সূত্র অনুসারে, হিংসার ঘটনাটি ঘটে যখন দুই ব্যক্তি লকডাউন চলাকালীন বাড়ির বাইরে বসেছিলেন। পুলিশ ওই এলাকায় টহল দেবার সময় তাদের বাড়ির ভেতরে যেতে বলে। পুলিশের অভিযোগ, এরপরই উত্তেজিত জনতা সেখানে জড়ো হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ মহিলাদের মারধর করে। এমনকি বয়স্ক মানুষ ও শিশুরাও পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ঘটনার পরে পুলিশই উল্টে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৬২ বছরের এক বৃদ্ধও রয়েছেন। তিনি একা পায়ে হেঁটে বাইরে বেরোতে পর্যন্ত পারেন না। তিনি কীভাবে লকডাউন ভাঙলেন, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
শাহপুরের এক বাসিন্দা জুনায়েদ জানাচ্ছেন, পুলিশ চরম পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নির্দোষ মানুষদের গ্রেফতার করছে। পুলিশ এসে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তল্লাশি করছে। মহিলারা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে ভীতসন্ত্রস্ত ভাব। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ৫৯ বছরের রাজিয়া বানু জানাচ্ছেন, পুলিশ কাউকে ইফতার করতে দেয়নি। একটু জলও পান করতে দেয়নি। রমযান মাসে মানুষ বিশ্রাম নেয় বা ঘুমোয়। কিন্তু পুলিশ যেকোনও সময় এসে তল্লাশি শুরু করছে। ১২ বছরের এক অবুঝ বালককে ওরা প্রত্যক্ষদর্শী বানিয়ে মানুষজনকে গ্রেফতার করছে। ছেলেটি কিছু জানে না বললে তাকে পুলিশ শাসাচ্ছে বলে রাজিয়া জানাচ্ছেন। শেখ করিম মিয়ার ছেলের পা সার্জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে পিটিয়েছে। তার পায়ে প্লেট ছিল। এই তথ্য জানালে পুলিশ আরও বেশি করে তাকে মারধর করে বলে করিম মিঞা জানাচ্ছেন।
শাহপুরের আরেক বাসিন্দা ফারজানা বানু জানাচ্ছেন, তার পুত্র যখন নামায পড়ছিল তখন ৭-৮ জন পুলিশ দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ২-৩ জন পুলিশের পোশাক পরে ছিল, বাকিরা সাদা পোশাকে ছিল। তারা ফারজানাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং প্রস্তুত করা ইফতার সামগ্রী লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে। জায়নামাজে বুট পড়ে উঠে পড়ে এবং তার পুত্রকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। পুত্র একজন কুরআনের হাফিজ। তার স্বামীকেও পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সেদিন ইফতার করার জন্য তার কাছে আর কিছুই ছিল না বলে জানাচ্ছেন ফারজানা।
আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে