Wednesday, March 12, 2025
Latest Newsফিচার নিউজসম্পাদক সমীপেষুসম্পাদকীয়

গর্ভবতী সফুরার থেকেও গর্ভবতী হাতির কদর বেশি! দেশ কি ‛এথনিক ডেমােক্রেসি’র পথে?

অধ্যাপক আব্দুল মাতিন : গর্ভবতী হাতি আর গর্ভবতী সফুরা। এখানে মানুষ অপেক্ষা জন্তুরকদর বেশি। এ কোন সংস্কৃতির শিকার আমরা? গর্ভবতী হাতির বােমা বিস্ফোরণে মারা যাওয়া অবশ্যই অমানবিক, তবে সফুরা জারগারের মতো জামিয়া মিলিয়ার গবেষক অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীকে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখা কতটা মানবিক? হাতির মৃত্যুতে সারা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, দেশের প্রায় সমস্ত সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় স্থান পেয়েছে সেই খবর। এমনকি নেট দুনিয়াও তোলপাড় হয়েছে এই অন্তসত্ত্বা হাতির মৃত্যু নিয়ে। অথচ সফুরা জারগারের জামিনের আবেদন খারিজ হল কেন তা নিয়ে কোন চর্চা হল না সংবাদ মাধ্যমে। নিরব থাকল নেট দুনিয়াও।

ভারতে লকডাউন প্রায় পৌনে তিন মাস ছুঁই ছুঁই। আর এই মহামারীর সংকটের মধ্যেই দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল এবং এনআইএ ব্যস্ত সিএএ বিরােধী আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করতে। আর এই চিত্র প্রায় সবকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে একই। আমরা দেখে চলেছি সংগঠিতভাবে পুলিশ প্রশাসন একের পর এক গবেষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করছে। কাফিল খান, সারজিল ইমাম, গুলিফসা খালিল সাইফি, মিরান হাইদার, আনন্দ তেলচুম্বে ও বিশেষ করে জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রী ও
জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটির কো-অর্ডিনেটর সফুরা জারগারে কথা আমরা জানি। এমন অনেকে আছেন যাদের কথা আমরা জানি না। প্রায় প্রত্যেক গ্রেফতার হওয়া নাগরিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ সহ বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরােধ আইন (ইউএপিএ)-এর মতাে কঠোর আইনের ইস্তেমাল করছে।

আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সমস্তু ধরণের আইনের মাধ্যমে তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষদের দমন ও গ্রেফতার করত। খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, স্বাধীনােত্তর ভারত প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল পরিচালিত সরকার ওই সমস্ত কালোনিয়াল জনবিরােধী আইনগুলি খারিজ না করে সময়ে সময়ে সংগঠিত করে আরও কঠোর করে তুলেছে। আর বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী ও বর্ণবাদী বিজেপি সরকার সেই কঠোর আইন প্রয়ােগ করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, কিভাবে এই কঠোর আইনগুলি (টাডা, পোটা, মােকোকা, ইউএপিএ, এএফএসপা ইত্যাদি) প্রয়োগ হয়েছে আর্থসামাজিক মার্জিনালাইজ কমিউনিটির মধ্যে, বিশেষ করে দলিত আদিবাসী সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ঠিক যেভাবে আমেরিকায় ব্লাকসদের রাসিয়ালি স্টিগনালাইজড করা হয়।

ভারতের দলিত আদিবাসী ও মুসলমানদের স্টিগমাটাইজড করার প্রক্রিয়া কিন্তু দীর্ঘদিনের। আমাদের মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তুক, বর্ণবাদী সংস্কৃতি এক ধরণের ‛কমান সেন্স’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এই স্টিগমাকে। আর এই স্টিগমা ভারতীয় মুসলমানদের দেশপ্রেম স্বাধীনতা সংগ্রামকে তুচ্ছ করে এক সন্দেহজনক ও দেশের বােঝা হিসেবে পরিণত করার মানসিকতা তৈরি করেছে। ঘৃণা ও বিদ্বেষের পরিবেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলিত আদিবাসী ও মুসলমানদের প্রতি এই অবিচার, এক ধরণের সামাজিক বৈদ্ধতা পাচ্ছে যেটা কিনা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘৃণা ছড়াবে এটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ এটা তাদের দীর্ঘদিনের এজেন্ডা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিরবতা, বিশেষ করে বৃহৎ সমাজের মানুষের নিস্তব্ধতা। আর এই ‘সিলেকটিভ সাইলেন্স’ শুধুমাত্র সংবিধানের ‛মৈত্রীর’ পরিপন্থী নয়, গােটা সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকারক।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!