দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : তখন
সাহেবি আমল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান চলছে। মাঠে মিলিটারি প্যারেডের আয়োজন রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রেরা কুচকাওয়াজ করতে করতে থমকে দাঁড়ায় ব্রিটিশ পতাকার সামনে। ব্রিটিশদের পতাকাকে কিছুতেই স্যালুট জানাবে না তারা। মঞ্চ থেকে উপাচার্য হুকুম করলেন, “পতাকাকে সেলাম করো। স্যালুট!” কেউ নড়ে না। অবশেষে জোর গলায় নিজের আপত্তি জানালো একজন। বিদ্যাসাগর কলেজের এক পড়ুয়া। উপাচার্য গেলেন খেপে। সবার সামনে নির্মমভাবে বেত মারা হলো ছাত্রটিকে।
উপাচার্যটির নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। গল্প নয়। সত্যি ঘটনা। তাঁর নিজের ডায়েরিতেই এর উল্লেখ পাওয়া যাবে। কংগ্রেস থেকে ভেঙে বেরিয়ে হিন্দু মহাসভায় যোগদানের সময় শ্যামাপ্রসাদ, দলে টানতে চেয়েছিলেন ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র বসুকে। কিন্ত সে আশায়, বেমালুম জল ঢেলে দিলেন সুভাষ। হিন্দুমহাসভার কাজ কর্মে তিতিবিরক্ত নেতাজি, মাঝে মধ্যেই লেঠেল পাঠিয়ে সভা ভণ্ডুল করে দিতেন। তাঁর ভারতবর্ষে, সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই ছিল না। দেশভাগ চেয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। ধর্মের ভিত্তিতে।
এই আশায় একাধিকবার চিঠি লিখেছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে। অবশেষে সত্যি হয়েছিল স্বপ্ন। হাজার হাজার ছিন্নমূল বাঙালির কান্না শুনে কি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পেরেছিলেন তিনি? কে জানে। অনেকেই বলেন তিনি বাঙালির গর্ব। পাঠ্যবইয়ের ফুটনোটে নাম থাকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। মেধাবী ছাত্র, সুযোগ্য সন্তান, দক্ষ রাজনীতিবিদ। “উনি না থাকলে ‘হিন্দু বাঙালি’ কোথায় যেত কে জানে!” এমনটাই সর্বত্র প্রচারিত, চর্চিত। আসল সত্যটি চাপা পড়ে রয়েছে ইতিহাসের অন্তরালে।