সম্পাদকীয়: আজ, ২৯ আগস্ট। কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ভারত, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষি মানুষ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কবি নজরুল ছিলেন বাঙালি জাতির এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তি। তার লেখনীতে ছিল দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, সাম্যবাদী চেতনা, এবং বিদ্রোহের স্পন্দন। কাজী নজরুল ইসলাম একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‛অগ্নিবীণা’ ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ‛বিদ্রোহী’ কবিতাটি ছিল বিপ্লবী ভাবধারার। এই কবিতায় নজরুল ব্রিটিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং বাঙালি জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা যেন তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে।
নজরুল ছিলেন একজন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তি ছাড়া বাঙালি জাতির মুক্তি সম্ভব নয়। তিনি তার লেখনীতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
নজরুল ছিলেন একজন আধুনিক কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করেন। তার কবিতা ছিল ছন্দোবদ্ধ, কিন্তু তাতে ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। তিনি বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ ও বাক্যাংশের প্রবর্তন করেন। নজরুল সুরকার হিসেবেও নিজের ছাপ রেখে গেছেন।
তিনি অনেক গান রচনা করেন, যার মধ্যে “চল চল চল ইসলামের সৈনিক” গানটি অন্যতম। এই গানটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গান। নজরুলের কবিতা আজও বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা। তার কবিতা আমাদেরকে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, এবং সাম্যবাদী চেতনার শিক্ষা দেয়। তার কবিতা আমাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের জন্য লড়াই করার আহ্বান জানায়।
নজরুল তার লেখনীতে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির সুর তুলেছেন সবসময়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের মানুষই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। নজরুলের কবিতা ও গানেই হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির শিক্ষা ফুটে উঠেছে। তিনি হিন্দু-মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ―
“হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ
হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ
হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ
ভেদাভেদ ভুলিয়ে দাও
একতাবদ্ধ হো যাও”
নজরুল তার লেখনীতে হিন্দু-মুসলমানদেরকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ―
“হিন্দুর ঘরে মসজিদ গড়ে
মুসলমানের ঘরে মন্দির গড়ে
একই ধর্মে মিলিয়ে দেব
হিন্দু-মুসলমান দু’জনে”
নজরুলের কবিতা ও গান আজও আমাদেরকে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। তার লেখনী আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আজ, যখন সারা বিশ্বে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি বিপন্ন, তখন নজরুলের কবিতা ও গান আমাদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। নজরুলের আদর্শ আমাদেরকে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য লড়াই করার প্রেরণা দেয়।
নজরুল শুধু একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। তিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি তার লেখনী ও কাজের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের বীজ বপন করেছেন।
নজরুল আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার কবিতা ও গান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার আদর্শ আমাদেরকে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য লড়াই করার প্রেরণা দেয়। আজ, নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে, আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তার কবিতা ও আদর্শকে লালন করে চলব এবং তার দেখানো পথে দেশ ও মানবতার জন্য লড়াই করব।