দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: ‛শাহ অলিউল্লাহ্ পুরস্কার’- এ ভূষিত হলেন বিখ্যাত ইসলামীক চিন্তাবিদ প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন মাওলানা মাওলানা সাইয়্যেদ জালালুদ্দিন উমারী। রবিবার ‘ইনস্টিটিউট অফ অবজেক্টিভ স্টাডিজ’ এর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ অনলাইন অনুষ্ঠানে “চতুর্দশ শাহ্ অলিউল্লাহ্” পুরস্কারে ভূষিত করা হয় মাওলানাকে। পুরস্কারে ছিল শংসাপত্র, এক লক্ষ টাকার চেক এবং একটি স্মৃতিসৌধ। এ পুরস্কার মাওলানা ‘উমারীর দাওয়াতি ময়দানে উল্লেখযোগ্য অবদান ও যথাযোগ্য মর্যাদার স্বীকৃতি স্বরূপ দেওয়া হয়।
মাওলানা সাইয়্যেদ জালালুদ্দিন ‘উমারী উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের মধ্যে পরিগণিত। তাঁর ব্যক্তিত্ব জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাঙ্গনে পরিচিতির মুখাপেক্ষী নয়। ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন দিক ও বিভাগে: ইসলামী শাসনব্যবস্থা, ইসলামী আক্বিদাহ্ ও বিশ্বাস, ক্বুরআন বিষয়ক তথ্য, মানবাধিকার, আধুনিক সমস্যা এবং ইসলামী সমাজ বিষয়ে মাওলানা ‘উমারীর ডজন চারেকের অধিক রচনা রয়েছে। তিনি ভারতবর্ষের ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় পথনির্দেশনকদের মধ্যে একজন। বিশেষ করে ইসলামের দাওয়াত বিষয়ে তিনি উন্নত মানের গবেষণা মূলক কাজ করেছেন। এই বিষয়ে তাঁর পাঁচটি গ্রন্থ আছে। ‘মারুফ ও মুনকার’, ‘ইসলামের পথে আহ্বান’, ‘আল্ল-হর দিকে আহ্বানের পথ’, ইসলাম একটি দ্বীনের ডাক’, দা’ওয়াত ও তারবিয়াহ্’, ‘ইসলামের দৃষ্টিকোণ’ এবং ‘ভারতবর্ষে ইসলামের দা’ওয়াত’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি তাঁর অন্যান্য রচনাবলী ও বক্তৃতার মধ্যেও একেই আলোচ্য বিষয় বানিয়েছেন।
বর্তমানে মাওলানা ‘উমারী জামা’আতে ইসলামী হিন্দের প্রতিষ্ঠিত ‘শরিয়াহ্ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সহ- সভাপতি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাতের সভাপতি, আজমগড়ের বিলাড়িয়াগঞ্জের ‘জামে’য়াতুল ফালাহ্’র রেক্টর, আলীগড়ের ‘সিরাজুল উলুম মহিলা কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
মাওলানা আন্তর্জাতিক জনকল্যাণমূলক সছবা প্রতিষ্ঠান ‘আলহাইয়াতুল খইরিইয়্যাতুল ‘আলামিয়্যাহ্’ কুয়েতের সদস্য ও বটে।
১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জামা’আতে ইসলামী হিন্দের নায়েবে আমীর, অতঃপর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমীর ছিলেন। এছাড়া মিল্লী ও আন্দোলনী এবং জ্ঞানচর্চার পরিমণ্ডলে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
আই, ও, এস, এর চেয়ারম্যান ডঃ মনজুর আলম তার ভাষণে বলেন:
মাওলানা সাইয়্যেদ জালালুদ্দিন ‘উমারীর এই বৃহত্তর দাওয়াত, সংস্কার ও গবেষণা মূলক সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ ইনস্টিটিউট অফ অবজেক্টিভ স্টাডিজ অত্যন্ত গর্বের সাথে তাঁর হাতে এই আশায় ‘চতুর্দশ শাহ্ অলিউল্লাহ্ পুরস্কার’ তুলে দিচ্ছে, যে বিশ্ব স্রষ্টা তাঁর দীর্ঘায়ু দান করুন এবং তিনি মুসলিম মিল্লাতকে গুরুত্বপূর্ণ সেবা দান করতে থাকুন।
এই বিশেষ অনুষ্ঠানে মাওলানা জালালুদ্দীন ‘উমারী তাঁর ভাষণে আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যাঁর বিশেষ তাউফীক্ব্ ও আনুকূল্যে তিনি দ্বীনের দাওয়াতের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন, এবং সাথে সাথে আই, ও, এস এর ডাইরেক্টর জনাব ডঃ মনজুর আলম ও তার দায়িত্বশীলদের শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে বলেন:
‘ইনস্টিটিউট অফ অবজেক্টিভ স্টাডিজ’ এর খিদমত বহুবিস্তৃত। এটা একটি প্ল্যাটফর্ম।এখানে বিভিন্ন মতাদর্শের চিন্তাশীল মানুষকে একত্রিত করা হয় এবং তাঁদের মত প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়। যাতে নানা সমস্যার সমাধান সহজ হয়।
মাওলানা আরো বলেন, দা’ওয়াত বা আল্ল-হর পথে আহ্বান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তা পালন করতে হবে। মানুষ যাতে এ বিষয়ে ত্রুটি না করে তা দেখার দায়িত্ব এই উম্মাতের উপর বর্তায়। দা’ওয়াত দানের এই মহৎ কাজ অতি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ১৪০ কোটি জনসংখ্যা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য, এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে কারা বসবাস করে এবং কোন শ্রেণীর মানুষ তা গ্রহণ করবে, আগে থেকে তার ফয়সালা করা যেতে পারে না। কোথাও তাকে গ্রহণ করা হতে পারে, আবার কোথাও তার বিরোধিতা হতে পারে। কোনো বিশেষ শ্রেণীকে দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে না। যাইহোক এটা মহান আল্ল-হর হুকুম। তা পালন করা আমাদের দায়িত্ব, দুনিয়া তাকে কবুল করুক অথবা না করুক এর মধ্যেই দেশে ও বিদেশে বসবাসরত মানুষের কল্যাণ নিহিত।
প্রখ্যাত সাংবাদিক সুহাইল আঞ্জুম অত্যন্ত সুন্দরভাবে মাওলানা সাইয়্যেদ জালালুদ্দীন ‘উমারী হাফিযহুল্ল-হ্ র রচনাবলীর রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তার পর দেশের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে মাওলানা সাইয়েদ র-বে’ হাসানী নাদভী, প্রফেসর আখতার আল্ অ-সে’, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ্ রহমানী, সাইয়েদ সা’আদাতুল্লাহ্ হুসাইনী এবং প্রফেসর মুহাম্মাদ ইশতিয়াক্ব্ সাহেবগণ সংক্ষিপ্ত মতামত ব্যক্ত করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা শাহ্ আজমাল ফারূক্ব্ নাদভী।